বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞানে একমাত্র ইমেরিটাস অধ্যাপক | Professor Emeritus

বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞানে একমাত্র ইমেরিটাসঅধ্যাপক।


কোনো প্রফেসর যখন অবসর গ্রহণ  করেন তখন উনার অসামান্য অবদানের জন্য এবং ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীরা যাতে উনার অবদান থেকে বঞ্চিত  না হন তখন উনাকে  সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দিয়ে সরকার সারাজীবন অধ্যাপনা  করার সুযোগ দেন।  একেই বলে ইমেরিটাস অধ্যাপক।

অরুণ কুমার বসাক



বাংলাদেশে পদার্থবিজ্ঞানে একমাত্র  এমিরিটাস অধ্যাপক হলেন ডক্টর  অরুন কুমার বসাক স্যার। একজন জীবন্ত কিংবদন্তি । নিউক্লিয় মিথস্ক্রিয়ার নতুন তত্ত্ব  দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে  তুলে ধরার মহানায়ক। বর্তমানে কর্মরত  আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।


জন্মঃ ১৯৪১  সালের ১৭  অক্টোবর পাবনার রাধানগর মহল্লায়।  পিতা মৃত হরিপদ বসাক ছিলেন একজন বেসরকারি চাকুরিজীবী। মাতা মৃত উষা  রাণী বসাক ছিলেন একজন গৃহিণী।


তিনি ১৯৫৭ সালে পাবনার রাধানগর মজুমদার  একাডেমি হতে তৎকালীন পূর্ব  পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ঢাকার অধীনে ফার্সট  ডিভিশনে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে। সেখান থেকে ১৯৫৯  সালে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন এবং তৎকালীন রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের সম্মিলিত মেধা তালিকায় ২য় স্থান অর্জন করেন।  পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স করেন রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে। ১৯৬১ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে অনার্স শেষ করেন। মাস্টার্স করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে।  এখানেও তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে সেই বছরেই অর্থাৎ ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে  প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।


বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদে সর্বোচ্চ নম্বর (৭৫%) পাওয়ায়  সম্মাননা হিসেবে ১৯৬৫ সালে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষাবৃত্তি লাভ  করেন। কিন্তু বিমানবন্দরে পাকিস্তান সরকার উনার পাসপোর্ট জব্দ করায় তিনি লন্ডন যেতে ব্যার্থ হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে তিনি কমনওয়েলথ পোস্ট গ্রেজুয়েট  স্কলারশিপ লাভ করেন এবং উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড যান। সেখানে বার্মিমহাম ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৭৫ সালে  পিএইচডি সম্পন্ন করেন। নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে সেখানে তিনি ডিপার্টমেন্টে প্রথম  স্থান অর্জন করেছিলেন। উনি কত জ্ঞানী ব্যাক্তি ভাবা যায়?


তিনি ১৯৮৫-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত রাজশাহী  বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসেবে ১৯৯০-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত  দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে আবার যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন।


শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে অসামান্য  অবদানের জন্য ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের একমাত্র এমিরিটাস প্রফেসর হওয়ার  গৌরব অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট ইউনিভার্সিটিতে  ১৯৯৭  সালে ভিজিটিং প্রফেসরের  দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ইলিনইস ইউনিভার্সিটিতে  রিসার্চ প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।


তিনি দেশে বিদেশে ১৩৯ টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ  করেছেন যার মধ্যে ৮৬ টি আন্তর্জাতিক জার্নালে স্বীকৃত ২৫  টি দেশীয় জার্নালে স্বীকৃত।


তিনি নিউক্লিয়ার বিষয়ক তত্ত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে  বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছেন। উনার লেখা ‘ব্যাবহারিক পদার্থবিজ্ঞান’ বইটি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি  থেকে প্রকাশিত হয় যা স্নাতক কোর্সে পড়ানো হয়।


গবেষণা আর  জ্ঞান বিতরণ করাই তার এ কমাত্র নেশা!


তাইতো অবসর গ্রহণের  পরেও শিক্ষকতা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে  বলেন   বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার যে কয়টা সন্তান রয়েছে, তাদের যদি  আমি কিছু জ্ঞান দান করে যেতে  পারি ও কিছু গবেষণা শিখিয়ে দিতে পারি তাহলে সেটি হবে আমার মনের  একমাত্র সন্তুষ্টি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন