ঢাকার সেরা দশটি পর্যটন স্থান

ঢাকার পর্যটন স্থান 

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে নতুন আরেকটি দেশের উদ্ভব হয় তার রাজধানী হয় ঢাকা। আজ  থেকে ৪০০ বছর পূর্বের সপ্তদশ শতকের মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদের শহর কিংবা রিকশা শহর নামে পরিচিত ঢাকা শহরের প্রতিষ্ঠিত হয়। রূপ বৈচিত্র্যের  পরিপূর্ণ প্রাকৃতিক লীলাভূমি বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ঢাকায় অতটা প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্যে পরিলক্ষিত হয় না তথাপি ইট-পাথরের কংক্রিটের গড়া এই নগরীর বিরামহীন খেটে খাওয়া মানুষদের খানিক বিশ্রাম  সহ্য নিঃশ্বাস গ্রহণের সুবিধার্থে কিছু কিছু স্থানে এখনো প্রকৃতির ছোঁয়া বিরাজমান। ছুটির দিন  কিংবা অবসর সময় নগরীর সিংহভাগ মানুষ তাদের ক্লান্তি গোছাতে অথবা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে এসব স্থানসমূহে প্রশান্তির আশায় দলবেঁধে ছুটে আসে। আজকে এমন কিছু নজরকাড়া দশম স্থানে তথ্য নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।  লেখাটি শেষ পযন্ত পড়বেন

 

ঢাকার দর্শনীয় স্থান,ঢাকার আশেপাশে দর্শনীয় স্থান,ঢাকার দর্শনীয় স্থান,ঢাকার পাশের দর্শনীয় স্থান,পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থান,পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থান,ঢাকার দর্শনীয় স্থান সমূহ,ঢাকার বিখ্যাত জায়গা,ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থান,ঢাকার কাছে দর্শনীয় স্থান,ঢাকার আশপাশের দর্শনীয় স্থান,ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা,ঢাকার পর্যটন স্পষ্ট,ঢাকার দর্শনীয় স্থানের তালিকা,ঢাকার ৫০ টি দর্শনীয় স্থান,ঢাকার কাছে দর্শনীয় স্থান,ঢাকার শীর্ষ ১০ টি দর্শনীয় স্থান,দর্শনীয় স্থান
ঢাকার পর্যটন স্থান

 

 .হাতিরঝিল

এক পাশে সবুজ অন্য পাশে ঝিলের টলটলে পানিতে ছুটে চলেছে একের পর এক যাত্রীবাহী ওয়াটার বাস আর তারই মাঝে সময় কাটানোর জন্য মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে এক বিনোদনকেন্দ্র। বলছি রাজধানীর  বুকে অবস্থিতি হাতির ঝিলের কথা। দূষণে আদাচ্ছিত ব্যস্ততম নগরীতে কর্ম ব্যস্ততাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পড়ন্ত বিকেলে প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে প্রিয়জনের সাথে কাটিয়ে দিতে পারে একটা আনন্দময় বিকেল গুলশান, বাড্ডা, তেজগাঁও, মৌচাক অথবা কারওয়ান বাজার, রামপুরা, ফার্ম গেট এবং মগ বাজার যাওয়ার সহজ মাধ্যম হিসেবে হাতির ঝিল  জায়গাটি  ব্যাবহৃত হয়েছে। পর্যটকদের সময় কাটানোর জন্য হাতিরঝিল স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পুল, বোটিং সুবিধা। এছাড়াও রয়েছে ভিউয়িলিং। হাতিরঝিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি নান্দনিক ভাসমান এম্পিথিয়েটার এখানে সাংস্কৃতিক ,শাস্ত্রীয় আচার পালন, সঙ্গীতানুষ্ঠান , নাটক এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।  রঙ্গ  মঞ্চে  আছে প্রায় দেড় হাজার দর্শক একত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে তাছাড়া এম্পিথিয়েটার  কাছে নির্মাণ করা হয়েছে দশতলা অত্যাধুনিক গাড়ি পার্কিং  ভবন। ভবনে  আরো রয়েছে হাতিরঝিলে প্রধান কার্যালয় জাদুঘর এখানে আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে আসতে হবে বিকেল, সন্ধ্যা   বা রাতে সময়টায়। কেননা ঝিলে সৌন্দর্যবর্ধনে স্থাপন করা হয়েছে আকর্ষণীয় প্রসবর। যা  গোধূলি বেলার পর থেকে রংধনুর মত বাহারি রঙের আলোয় আলোকিত হয়ে থাকে। সেই সাথে  সঙ্গীকে তালে তালে অসাধারণ ফলে ফলে  ফোয়ারা নৃত্য নজর  কাড়তে কোন পর্যটকের। বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে বহু দর্শনার্থীরা  সে হাতিরঝিল পরিদর্শন করতে। ভ্রমণ আরো আনন্দিত করার জন্য চলা শুরু হয়েছিল নৌভ্রমণের সুযোগ। জলাশয়ে  নৌ ভ্রমণ  করার জন্য রয়েছে প্যাডেল বোল্ট আর ওয়াটার বাস।  ঝিলে  ভ্রমণের  পাশাপাশি ওয়াটার বাসের  গুলশান, খিলগাঁও, রামপুরা, মৌচাক    মালিগাও  ঘুরে আসতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে আপনি কর্তৃত্ব অর্থ পরিশোধ করতে হবে   যাত্রীবাহী ওয়াটার বাস সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চালু থাকে। রাজধানী ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে সিএনজি অথবা বাসে করে যাওয়া যায় হাতির ঝিলে।

 

 

. আর্মেনিয়ান চার্চ

পুরনো ঢাকার আরমানিটোলায়  ১৭৮১ সালে ঢাকার ব্যবসায়ীর কাছে বসবাসরত আর্মেনিয়ানদের জন্য এই চার্চটি নির্মিত হয়। নাম দেয়া হয় চার্চ অফ দ্যা পালিরিজারেশন।  ১৬০৮ সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ঢাকাকে  শুভে বাংলার রাজধানী বলে ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের আনাগোনা শুরু হয় তখন আর্মেনিয়ান ব্যবসার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আগমান করেন এবং বর্তমান আরমানিটোলায় বসবাস করতে থাকেন। তাদের নাম অনুসারে জায়গার নাম করা হয় আরমানিটোলা। এমনকি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন  তারাই করেন গির্জাটি নির্মাণের পূর্বে এখানে একটি আর্মেনিয়াম কবরস্থান এবং ছোট একটি উপাসনালয় ছিল  গির্জার  ফটকে চমৎকার কারুকাজ করা অন্যসব ক্যাথলিক চার্চ থেকে   চার্জ সম্পূর্ণ আলাদা। আর্মেনীয়দের নিজস্ব স্থাপত্য রীতিতে তৈরী গির্জাটির  লম্বায় সাড়ে সাতশ ফুট।

চারিদিকে উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত।  গির্জার  চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে  অসংখ্য আর্মেনীয় কবর। কবর  গুলো রয়েছে শ্বেত পাথর , বেলে  পাথরে ,মার্বেল পাথর আর কষ্টি পাথরে তৈরি এপিটাস। এপিটাস গুলোতে মৃত ব্যক্তির নাম জন্ম মৃত্যু সাল ছাড়াও খোদাই করা আছে কাব্যিক ভাষায় আবেগপূর্ণ  শোক আবদ্ধ ধর্মগ্রন্থের বাণী। সম্পূর্ণ গির্জারতে  রয়েছে চারটি দরজা সাতাশটা জানালা। গির্জার তিন  দিক  থেকে ঘিরে রয়েছে  বারান্দা সমগ্র গির্জারটি  সাদা রঙ  করা   কলওয়া  রেলিং এর  ধারা গুলোতে  হলুদ রং দিয়ে নকশা করা। চার্চের ভিতরে রয়েছে  সারি সারি   ব্যাচ।  রয়েছে একটি  বেদীর। বেদীর উপর  যীশু খৃষ্টের   বিশাল ছবি। চার্চ  এখনো  পরিচালনা  করছে  আর্মিয়দের  শেষবংশধররা চার্চে  এখনো নিয়মিত প্রার্থনা সভা হয় না। তবুও ঢাকার বুকে আর্মেনিয়াদের স্থাপিত একমাত্র ঐতিহাসিক আর্মেনিয়ান এই  গির্জাটি  যুগ যুগ ধরে   আর্মেনিয়াদের  ইতিহাস স্মৃতি বহন করছে।

 

 

.তারা মসজিদ 

পুরান ঢাকার বহল্লা। মানে আবু সাঈদ এলাকার  ১১   আবুল খওড়া ছড়াতে  অবস্থান মসজিদটির। তবে  নির্মানকালে নির্মাতা সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি ধারণা করা হয় তৎকালীন ঢাকার সভ্রান্ত   জমিদার নিজের গোলাম দিয়ে আঠারো শতকের প্রথমাংশে মসজিদটি  নির্মান করেন ঐতিহাসিক তারা মসজিদ প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনে এক অন্যতম স্থাপনা। নির্মাণকালে  মসজিদটির দৈর্ঘ্য ছিল ৩৩ ফুট এবং প্রস্থ ছিল ১২  ফুট। এই মসজিদটি সতেরো শতকে দিল্লি,লাহোড় আগ্রায় নির্মিত স্থাপত্য শৈলীর অনুকরণে নির্মাণ করা হয়েছিল। কেউ কেউ   সিতারা মসজিদ নামে বলে থাকেন। আবার কেউ কেউ বলেন গোলাম পীরের মসজিদ মসজিদ।

তারা মসজিদ , সিতারা মসজিদ এবং গোলাম পীরের  মসজিদ  তিনটি  নামে বেশ  পরিচিত। বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে মসজিদটিকে।  প্রথম থেকেই এর আকৃতি ছিলাম আয়াতাকার মসজিদে উপরিভাগে বৃত্তাকার। তিনটি গম্বুজ রয়েছে। বিশেষ করে  গম্বুজে  খোদাই করা হয়েছে অসংখ্য নীল তারা   মূলত এই আকর্ষণীয় তারা নকশার কারণে এটি তারা মসজিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন   মসজিদের পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর দক্ষিন দিকে একটি করে মোট পাঁচটি প্রবেশপথ রয়েছে। এটি বহু খাঁজ বিশিষ্ট চারটি অষ্ট ভুজ আকৃতির   মসজিদের  মুখ্য প্রবেশ পথে রয়েছে বিশাল আকৃতির প্রস্রবণ বিশিষ্ট একটি তারা মসজিদের ভেতরে বাইরে জাপানের চিনিটির  কৌশলে এবং চিনামাটির  কাজও টুকরা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মোজাইক বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রিত কাগজে বর্তমান ১০০ টাকার গায়েও তারা মসজিদ কে তুলে ধরা হয়েছে।

 

.কার্জন হল 

কার্জন হল উপমহাদেশের মধ্যে ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলের নিদর্শন এর সাথে জড়িয়ে আছে দীর্ঘ ১১৬ বছরের ইতিহাসে ৪৭  দেশ ভাগ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের নীরব সাক্ষ্য এই স্থাপনা  দিয়ে আসছে   কার্জন হল জন্য মৌনক ভাষাসৈনিক মহান মুক্তিযোদ্ধা স্থাপনাটি শুধুমাত্র একটি ইট পাথরের ভবনই নয় বরং এর সাথে জড়িয়ে আছে এদেশের মানুষের আবেগ। কার্জন হলের ইতিহাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে পুরনো। অসাধারণ নির্মাণশৈলী স্থাপনাটি যেকোন ভাবুক  ব্যাক্তিকে দ্বিতীয়বার তাকিয়ে  দেখতে বাধ্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিলে নাম চলে আসে ঐতিহাসিক কার্জন হলের   ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য হিসেবে বিবেচিত ভবনটিতে সংযোজিত হয়েছে  ইউরোপের মোঘল স্থাপত্যরীতির দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ ঐতিহাসিক শিল্পের নিশ্চিত হয়েছে  আধুনিক কারিগরি বিদ্যা। মুঘল দ্বারে খিলান গম্বুজে প্রকাশ পায় পাশ্চাত্য  ইসলামকি  স্থাপত্য। ভবনটিতে সংযোজিত হয়েছে ইউরোপ   মুঘল স্থাপত্যরীতির   দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ। আংশিকভাবে মুসলিম স্থাপত্যরীতির ফুটে উঠেছে। ভবনের বাইরের অংশে গাঢ় লাল রঙের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। কিছুটা দূর থেকে দৃষ্টিনন্দন খিলান গম্বুজ   গুলো দেখতে চমৎকার দেখায়। কারুকার্যখচিত দৃষ্টিনন্দন ভবন রয়েছে একটি বিশাল কেন্দ্রীয় হল। ভবনটির সামনে রয়েছে একটি প্রশস্ত বাগান যেখানে সবুজের বুক চিরে পশ্চিম থেকে পূর্ব চলে গেছে একটি সরু রাস্তা এর পেছনে রয়েছে একটি বিশাল পুকুর। যাপশ্চিম পাড়ে শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের বই ভবন। দ্বিতল ভবন ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থপতি হিসেবে বিবেচিত পুরো ঢাকায় কার্জন হলের সমকক্ষ ঐতিহাসিক স্থাপনা খুব কমই রয়েছে। কার্জন হল একমাত্র স্থাপনা যা প্রতিষ্ঠান থেকেও এখনো  রূপরস ধরে রেখেছে। বিগত এক শতাব্দী বেশি সময় ধরে এই স্থাপনা যেন চির যৌবনা হয়ে দাঁড়িয়েছে রয়েছে। কার্জন হলের ভিতরে রয়েছে বিশাল হল  রুম। যা বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় কার্জনের  রং লাল কেন এমন প্রশ্নের উত্তর শুনতে অবান্তর মনে  হতে পারে। কিন্তু কার্জন হলে রং লাল  হবার পেছনে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে স্থাপনার ইউরোপীয়, মুঘল স্থাপত্য রীতির সম্মেলন ঘটেছে। মুঘল সম্রাট আকবরের ফতেহপুর সিক্রি দেওয়ান--খাস এর অনুকরণে লাল বেলেপাথরের পরিবর্তে ব্রিটিশরা গাঢ় লাল ইট ব্যবহার করেছে স্থাপনের মাধ্যমে ব্রিটিশরা প্রমাণ করতে চেয়েছে উপমহাদেশে তাদের অবস্থান আকবরের মত। কেননা একমাত্র আকবরকেই তারা শ্রেষ্ঠ যোগ্য মুঘল শাসক হিসেবে স্বীকার করতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের  প্রাণ ভ্রমা এই স্থাপত্য  বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অন্যান্য দর্শনার্থী জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। ব্রিটিশ স্থাপত্যের স্বাদ নিতে প্রতিদিন  এখানে অসংখ্য মানুষ  ভিড় জমায়।নানা ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আড্ডা পদচারণায় মুখরিত হয়

 

 

.জাতীয় জাদুঘর

 ১৯১৩ সালের আগস্ট ঢাকা জাদুঘর নামে  যাত্রা শুরু করেছিল জাতীয় জাদুঘর তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ঢাকা মেডিকেল কলেজে একটি কক্ষে এর উদ্ভাবন করেন স্বাধীনতার পর  ১৯৮৩ সালে থেকে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর অভিহিত করা হয় চার তলা ভবন স্থাপত্য নকশা  অত্যন্ত নজর কাড়া।২০ হাজার বর্গমিটারে ভবনটিতে ৪৬টি গ্যালারিতে রয়েছে প্রায় ৮৩ হাজারের বেশি নিদর্শন।  কেবল বাংলাদেশে নয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ জাদুঘর নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশ এগিয়েছে সভ্যতার প্রতিটি ধাপে সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এর প্রতিষ্ঠাতার বর্তমানে রয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে অপরদিকে রয়েছে প্রচুর গাছপালা। যা মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যাদুঘরে  প্রথম তলাটি যেন পুরো বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ। বাংলাদেশের মানচিত্র দিয়ে শুরু হয়ে তলাতে  আরো দেখতে পাবেন বাংলাদেশের গাছপালা ,প্রাণী, সুন্দরবন উপজাতিদের, জীবনধারা ,খড়িশিলা, ভাস্কর্য সমুদ্র এবং প্রাচীন যুগের নানাবিধ ভাস্কর্যটি। দ্বিতীয় তলায় দেখতে পাবেন বাংলাদেশি সভ্যতার ইতিহাসের ক্রমবিবর্তন বিভিন্ন সময়ে অস্ত্র ,বাদ্যযন্ত্র, চিনামাটির হস্ত শিল্প ,কুটির শিল্প ,পান্ডুলিপি ,সমকালের শিল্পকলা এবং বাংলাদেশের  নানাবিধ ঐতিহ্য  দিয়ে সাজানো হয়েছে এই  তলা।  ভবনের তৃতীয় তলয়া   রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তি প্রতিকৃতি ,চিত্র কর্ম বিশ্বসভ্যতা নানা নিদর্শন বাংলাদেশ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষা ভ্রমণের উপযুক্ত স্থান হতে পারে বাংলাদেশ জাদুঘর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রায়  দশ বেধে এখানে আসেন কেবল শিক্ষার্থীরা নয় নানা বয়সের  মানুষের আগমন ঘটে এখানে। ছোট ছোট বাচ্চাকে মা বাবার হাত ধরে যেমন ঘুরতে দেখা যায় তেমন দেখা যায় প্রবীণ গবেষকদের সব বয়সের মানুষের চাহিদা পূরণ করে আসছে জাদুঘর। প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে আড়াইশো মত মানুষ এখানে আসে দুপুরের পর থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে অন্যান্য দিনের চেয়ে লোকসমাগম বেশি হয় এখানে। কেবল বাংলাদেশীরা বিভিন্ন দেশের নাগরিকরাও আসে জাদুঘরে। বিদেশী নাগরিকদের সুবিধার্থে যাদুঘর কতৃপক্ষ  ৭জন গাইডের  ব্যবস্থাও করেছে। বাংলাদেশ জাদুঘর রয়েছে আনুমানিক ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার বই সংবলিত নিজস্ব   গ্রন্থাগার। গবেষণার কাজে গ্রন্থাগার  বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।  এছাড়া রয়েছে জাদুঘর মিলনায়তন  যা বিভিন্ন কর্মসভা, সেমিনার  বা সভার কাজে ব্যবহার করা হয়। জাতীয় জাদুঘর শাহবাগ এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত   আপনার এলাকা থেকে শাহবাগ রুটের যেকোনো বাসে করে চলে আসতে পারেন এখানে

 

 

. ঢাকেশ্বরী মন্দির

 ঢাকার সবচেয়ে প্রাচীন মন্দির ঢাকেশ্বরী মন্দির। ঢাকেশ্বরী নামটি শেষে ঢাকা ঈশ্বরী বা  ঢাকা শহরের রক্ষাকর্ত্রী দেবী হতে। অনেকের মতে ঢাকা শহরের নামের ঢাকেশ্বরী নাম থেকে। ঢাকেরশরী মন্দির স্থাপত্য  রীতি,গঠন বিন্যাস, শিল্পচার্য মন্দিরটির  সমগ্রি দৃশ্য থেকে মাধুর্যময় করে তুলেছেন হিন্দু ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী কিংবদন্তি অনুসারে দক্ষ রাজার কন্যা সতীপতি নিন্দা সহ্য করতে না পেরে। দেহ ত্যাগ করলে শোকে মুহ্যমান মহাদেব  সতীর দেহ কাধে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন। সেসময় বিশ্বচরাচর  ধ্বংস  উপক্রম হয়। তখন নারায়ন  সুদর্শন  চক্র সহযোগে সতীর দেহ খন্ড খন্ড করতে থাকেন। এভাবে সতীর দেহ ৫১টি খন্ডে পরিণত হয় পৃথিবীর নানা প্রান্তে পতিত হয় প্রতিটি স্থানকে এক একটি সতী  পীঠ বলে। সতী দেহের উরুচল  গিরি টের ধার, তথা উজ্জ্বল গয়নার অংশবিশেষ স্থানে পড়লে স্থানের নাম হল ঢাকা। ঢাকা থেকে ঢাকেশ্বরী আরেকটি কিংবদন্তি  অনুসারে ১২০০ শতাব্দীতে রাজা বল্লাল সেন শৈশবের জঙ্গলে থাকা অবস্থায় একটি মূর্তি বেছে নেন পরবর্তীতে সিংহাসনে আরোহনের পর সেই স্থানে একটি মন্দির স্থাপন করেন। আর মন্দিরের নাম করেন  ঢাক+ ঈশ্বরী। অবশ্য ঢাকেশ্বরী মন্দিরের  ঐতিহাসিক সম্পর্কে  নানা কাহিনী প্রচলিত আছে তবে বর্তমান  মন্দিরটি ২০০ বছরের পুরনো। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের  ঢোকার সময় আপনাকে স্বাগত জানাবে একটি রাজ ফটক।রাজ  দরবারে মতো উঁচু আর প্রশস্ত ফটোটি মনে হবে যেন দুই হাত বাড়িয়ে আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন ঢোকার পরে হাতের ডান দিকে পাবেন ঢাকেশ্বরী  মূল মন্দির। এই  মন্দিরের মূল ফটক দুইটি তবে সাধারণত বেশিরভাগ মানুষ মাঝখানে গেট দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই আপনি পা রাখবেন নাট মন্দিরে নাট মন্দিরে সোজাসুজি দেখতে পাবেন দুর্গা দেবীর প্রতিমা। নানায়রং নানারকম অলংকারী সুসজ্জিত প্রতিমা দেবীর মুখ দেখলেই নিমিষে মুক্তি পেয়ে যাবেন সব মানসিক চাপ থেকে। আর পাপের সব বিপদ আপদ থেকে রক্ষা। ঢাকেশ্বরী সৌন্দর্যে অন্য মাত্রা যোগ করেছে ঠাকুরপুকুর। পরিচ্ছন্ন পুকুরটিতে দর্শনার্থী অথবা ভক্তরা  ভোগ দিয়ে থাকে। পুকুরটি চারপাশ বাঁধাই করা। ছোট-বড় কিছু মাধুর্য রয়েছে।

 

 

 

.জাতীয় সংসদ ভবন

 বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন মানিক মিয়া এভিনিউ উত্তর পাশে শেরেবাংলানগরে অবস্থিত সমগ্র শেরে বাংলা নগরে এক পঞ্চম স্থান সংসদ এলাকা ১০৮ একর জমির উপর বিশাল খোলা চত্বরে রূপকের সম্পূর্ণ কংক্রিট ঢালাই বৃত্তাকার নির্মিত নয়তলা ভবনের চারিদিকে রয়েছে কৃত্রিম লেক।  লেকের স্বচ্ছ পানিতে  ভবনের   ছবি প্রতিছবি বিম্বিত হয়। বিখ্যাত মার্কিন স্থাপতি লুই আই কানের অমর কৃত্বি এই সংসদ ভবন।  এটি আধুনিক স্থাপত্য নকশা এক অপূর্ব নিদর্শন। ভবনের পরিকল্পনা  অনুমোদিত হয় ১৯৬৯  সালে এর মূল নকশা  অনুমোদিত হয় ১৯৬২ সালে   এবং ১৯৬৪     পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাজধানীতৈ এর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। প্রায়  ৮০  শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার  পর  ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নাখালপাড়ায় প্রাদেশিক পরিষদ ভবনে সংসদে কাজ চালু হয় এবং জাতীয় সংসদ ভবনে অবশিষ্ট কাজ পুনরায় শুরু হয়    ১৯৮২ সালে সংসদ ভবনের কাজ শেষ হয়। ভবনটি  পৃথক ৯টি ব্লকে বিভক্ত একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কমপ্লেক্স মাঝখানে কেন্দ্রীয় ব্লগে নিচের তলায় ৩৫৪টি আসনের প্রধান হল রুম। সেখানে সংসদের অধিবেশন বসে। এর   চারপাশের চারটি অফিস প্লক। মূল ভবনের কোথাও কোনো কলাম নেই। কাঠামো ভারসাম্য ঠিক রাখতে ত্রিকোণাকৃতির ভাগ অংশের কলাম রয়েছে। ফাঁকা অংশ দিয়ে মূল ভবনে সহজে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। সংসদ ভবনের বাইরে বৃত্তাকার লেক  পেরিয়ে বিশাল খোলা চত্বরে   দক্ষিণাংশে খোলা প্রান্তরে সকাল-সন্ধ্যা শত শত নারী-পুরুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে এটি অবশ্য বিনোদনে এক মনোরম স্থান।

 

.সোনারগাঁও

শহরে কর্মব্যস্ত কোলাহলপূর্ণ জীবন থেকে একটু ছুটি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁও থেকে। যারা ইতিহাস-ঐতিহ্যের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন তারা নিঃসন্দেহে যেতে পারে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও। ছুটির দিনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন ইতিহাসের প্রাচীন নিদর্শনে ।আর একে আরো বাড়তি লাভ হলো পরিবারের ছোট বাচ্চাদের বাংলার প্রাচীন  ইতিহাস অনেক কিছু স্বচক্ষে দেখার সাথে সাথে জানানো হবে যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক কাজে দেবে সোনারগাঁও এর ইতিহাস শিল্পকলা সংস্কৃত সাহিত্যে সোনারগাঁও ছিল  বাংলাদেশর এক গৌরবময় জনপদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত নৈসর্গিক পরিবেশে প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও নামটি উদ্ভব হয়েছে সুবর্ণগ্রাম থেকে আবার অনেকের মতে বারোভূঁইয়ার প্রধান ঈশা খাঁর স্ত্রীর    সোনাবিবির নামে সোনারগাঁও এর নামকরণ করা হয়েছে  আনুমানিক ১২৮১ খিস্টাব্দে  এই অঞ্চলে মুসলিম আধিপত্য সূচনার  পর আওরঙ্গজেবের আমলে বাংলার রাজধানী ঢাকা ঘোষণা হওয়ার আগ পর্যন্ত মুসলিম সুলতানের রাজধানী ছিল সোনারগাঁও যদিও তখন প্রাচীন রাজধানী পানামা নামে নামে পরিচিত ছিল ঈশা খাঁর  তার বংশধরদের শাসনামলে সোনার কাজ ছিল পূর্ব বঙ্গের রাজধানী। বর্তমানে সোনারগাঁও নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। সোনারগাঁও রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লোক কারুশিল্প জাদুঘর ,জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর ,পানাম সিটি এবং বাংলার তাজমহল। প্রাচীন লৌকো কারুশিল্প জাদুঘর আবহমান গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি লোকশিল্পকে ধরে রাখা এবং সর্বজনস্বীকৃত যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৭৫ সালের ১২ই মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁওএ পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশের লোক কারুশিল্প ফাউন্ডেশন পানাম নগরী ঠাকুরবাড়ি ঈশাখা রোড দুটি কে একত্রে নিয়ে প্রায় ১৬ হেক্টর জায়গা জুড়ে কারু লোকশিল্পের ফাউন্ডেশন অবস্থান।  প্রায় সাড়ে ৪০০০ প্রাচীন নিদর্শন কর্তৃপক্ষকে কর্তৃক যথাযথভাবে সংরক্ষিত রয়েছে জাদুঘরে জাদুঘর ইতিহাসে  বাংলাদেশের  গ্রাম বাংলার প্রাচীন শিল্পীর সুনিপুন হাতে তৈরি বিভিন্ন শৈল্পিক  দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য  নানা পণ্য সামগ্রী। এর প্রতিটি   হস্তশিল্পে দক্ষ শিল্পীরা ফুটিয়ে তুলেছে প্রাচীন বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য।

পানামা নগর সোনারগাঁও থেকে  কিলোমিটার দুরে হারালে নগরী নামে পরিচিত পানাম নগরের অবস্থান হারানো নগরী নামে পরিচিত হবার কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত  এক সমৃদ্ধ জনজীবন ছিল পানাম নগরীতে।  যা আজ  বিলীন   শুধু স্মৃতি হয়ে পড়ে রয়েছে। দুই  ধারে   বিস্তৃত দালাল গুলো। নগরে ভিতরে  চলে যাওয়া দীর্ঘ সড়কের দুই পাশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন লাল ইটে নির্মিত স্থাপত্য   ভবন যার উপর ভিত্তি করে পানাম নগর গড়ে উঠেছিল উভয় পাশের মোট বায়ান্নটি প্রাচীর  বাধ  গুলো দিয়ে পানাম নগরী মূল আকর্ষণ   এর  সন্ধানে  পর্যটকদের জন্য পানাম নগর ভবন নির্মাণ শিল্প অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন। প্রায় ৪০০ বছর আগে পানামনগর স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছিল। প্রধানত ব্যবসায়ী জমিদাররা বসবাস করতে পানামা নগরে। বাংলার  তাঁতী ব্যবসায়ীদের ব্যবসার মূল কেন্দ্রস্থল অবস্থল ছিল এই নগরী। মসলিন  সহ অন্যান্য তাঁত শিল্প নিয়ে  তাদের ব্যাবসার লেনদেন হতো পানাম নগরী থেকে পরিচালনা করত পানাম নগরী দুই রাস্তার ধারে গড়ে ওঠা  অট্টালিকা, মসজিদ ,মন্দির ঠাকুরঘর ,গোসলখানা, মাছঘর  প্রশস্ত দেয়াল,প্রমদারয় ইত্যাদি দর্শকদের  নিসন্দেহ ভাল লাগবে  

 

 

৯ .লালবাগ কেল্লা

লালবাগ কেল্লা মোঘল আমলে বাংলাদেশে একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন যাতে। এক সাথে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর আর রঙবেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া বাংলাদেশে  আর কোন ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন কিছু সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন হাজারো দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয় ঢাকা লালবাগ এলাকার এই দুর্গটি স্বাভাবিকভাবেই জিগ্যেস যুগের কাল যা চিন্তা করেন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তার মাথায় আসবে যে লালবাগের থাকার কারণে এর নাম লালবাগ কেল্লা রাখা হয়েছে। ধারণাটি মোটেও ভুল নয়।  আসলে এর নামকরণ করা হয়েছে  এলাকার উপর ভিত্তি করে। তবে প্রথমে এর নাম ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। যাতে এলাকা কোন প্রভাব ছিল না। একদম   শুরু দিকে এর নাম ছিল   কেল্লা আওরঙ্গবাদ। দূর্গটিতে  তিনটি স্থাপনা রয়েছে দেওয়ান--আম। পূর্বদিকের স্থাপনাটি দ্বিতল বিশিষ্ট নিচ  তলায় রয়েছে একটি হাম্মামখানা। উপরিতলের দরবার হওয়ার ধারণা করা হয় শায়েস্তা খাঁ এই ঘরে বসবাস করতেন। দরবার হলটিতে রয়েছে বিভিন্ন  মুদ্রা, অস্ত্রশস্ত্র ,হাতে লেখা কোরআন,  প্রচ্ছদ পত্র ইত্যাদি। আরো আছে পরি বিবির মাজার শায়েস্তা খাঁর কন্যার ইরান দুঃখত রাহমাত ভানু যাকে  পরিবিবি  নামেও ডাকা হতো। তাঁর মৃত্যুর পর দিওয়ান--আম শাহী মসজিদের মাঝখানে স্থাপনাটিতে  তাকে সমাহিত করা হয়। মূল্যবান মার্বেল পাথর, কষ্টিপাথর আর বিভিন্ন ফুল পাতার নকশা করা ঢালি দিয়ে মাজারের নয়টি ঘর সাজানো রয়েছে তিন গম্বুজবিশিষ্ট শাহী মসজিদ কিন্তু এখানে রয়েছে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র  শাহাজাদাত আজম এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি  মুঘল মসজিদের আদর্শ উদাহরণ। বর্তমানে মসজিদটিতে    ব্যবহৃত হচ্ছে এছাড়া এখানে রয়েছে একটি বর্গাকৃতি পানির ট্যাংক,দীর্ঘ প্রাচীর একটি রহস্যময় গুপ্তপথ জনশ্রুতি আছে এই দুর্গ থেকে  বুড়িগঙ্গা  তলদেশ দিয়ে জিনজিরা প্রাসাদ নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা দুর্গ সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। আরেকটি কথা শুনেছে যে কেউ  এই সুরঙ্গ পথে প্রবেশ করলে আর ফিরে আসে না। যদিও ইতিহাসে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

 

 

১০.আহসান মঞ্জিল

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকায় নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ  হল আহসান মঞ্জিল। পুরান ঢাকার  খিলজি অলিগলি পার হওয়ার পর ঝামেলা এখানে খুব একটা ঝামেলা এখানে খুব একটা পোহাতে হয় না। বামের  মোড় দিয়ে  রাইস ঘাটের  রাস্তা ধরে হাতের বামে বুলবুল ললিতকলা একাডেমী ফেলে সোজা  তাকালে চোখে পড়বে এটির লাল রঙের  প্রাসাদ। কাছে গিয়ে পাঁচ টাকায় টিকিট কিনে ঢুকলে বিশাল এই দ্বার।  অনেক রকমের ফুল গাছ, পাতা বাহার ,নারকেল আর সুপারি গাছে ভরা সবুজ বন মন মাতানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজে যেন নব যৌবন ফিরে পায়  বাতাসে ফুলের সুবাস সামনে প্রাচীর প্রাসাদ। মুহূর্তেই নিয়ে যায়  মনের কল্পনার রাজ্যে রেশের হাত ধরে  মৃদু পায়ে হেটে চলা এভাবে সপ্তাহে ছয় দিনই প্রাণের স্পন্দন জাগে আহসান মঞ্জিলে। প্রকৃতি ছেড়ে এবার প্রাসাদের   দিকে যাওয়া যাক। অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বুড়িগঙ্গা তীর ঘেসে  তখনকার জামালপুর পরগনা জমিদার  শেখ এনায়েতুল্লাহ রংমহল প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর মৃত্যুর পর জমিদারের ছেলে শেখ মতিউল্লি এটি ফরাসি  বনিকদের কাছে বিক্রি করেন। ১৮৩৫ সালের দিকে বেগম বাজারে বসবাসকারী নবাব আব্দুল গনির বাবা  খাজা আলি মুদ্রা  এটা কিনে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন    ১৮৭২ সালের  নবাব  আব্দুল গনি নতুন নির্মাণ করেন  তার ছেলে আহসানউল্লাহ নামে নামকরণ করেন    আহসান মঞ্জিল। এটি একটি দোতলা ভবন বারান্দা মেঝে মার্বেল পাথরে তৈরি   প্রতিটি কক্ষে আকৃতি  অষ্টকোণ। প্রাসাদের ভেতরের দুই ভাগে বিভক্ত। পূর্বদিকে বড় খাবারে ঘর ,উপর দিকের লাইব্রেরী ,পশ্চিম দিকে জলসাঘর। পুরো ভবনের ছাদ কাঠের তৈরি।  নিচতলায় খেলাঘরে রয়েছে বিলিয়ার্ড খেলার জন্য আলাদা জায়গা। দরবার হলটি    সাদা,সবুজ হলুদ পাথরের তৈরি।  দোতলায় বৈঠকখানা,  গ্রন্থাগার , তিনটি মেহমান কক্ষ। পশ্চিম দিকে আছে নাচ ঘর আর করার কয়েকটি আবাসিক কক্ষ।আহসান মঞ্জিল ঢাকার প্রথম ইট পাথরের তৈরি স্থাপত্য। যেখানে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা হয় নবাবদের  হাতে   মঞ্জিলে স্থাপত্য শৈলী পশ্চিমাদের সবসময় আকৃষ্ট করত। লর্ড কার্জন এখানেই থাকতেন।    বাংলাদেশ সরকার  আহসান মঞ্জিলকে জাদুঘর হিসাবে সংরক্ষণ করেন। ১৯৯২ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়  আহসান মঞ্জিল। জাদুঘরে  করে এখন পর্যন্ত সংগৃহীত নিজস্ব সংখ্যা প্রায়৪০৭৭।এই রঙ মহলে ৩১টি কক্ষের মধ্যে ২৩টিতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে এছাড়া ১৯০৪ সালে আলোকচিত্রশিল্পী ফিজোক্যাপের তোলা ছবি অনুযায়ী কয়টি কক্ষ সাজানো হয়েছে। প্রাসাদের বিভিন্ন অংশে রয়েছে প্রশস্ত খোলা জায়গা রয়েছে আর সুবিস্তীর্ণ আকাশ   যেখানে রয়েছে গল্পা আসরের  সুন্দর ব্যবস্থা।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন