মরিচ গাছের যত্ন নেওয়ার নিয়ম

মরিচ গাছের যত্ন 

অর্থকরী ফসল হিসাবে বেশ সুনাম রয়েছে মরিচের। বর্তমানে নানান রকম মরিচের আবাদ হচ্ছে আমাদের দেশে। মরিচ চাষ করে বর্তমানে আমাদের দেশের কৃষকেরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। তবে মরিচ চাষ করার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মরিচের ক্ষেতে বিভিন্ন ধরণের রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হয়। নিম্নে মরিচের কিছু রোগবালাই ও তার প্রতিকার উল্লেখ করা হলো-


মরিচ গাছের পরিচর্যা,মরিচ গাছের যত্ন,মরিচ গাছ,নাগা মরিচ গাছের যত্ন,মরিচ গাছের পোকা,মরিচ চাষ পদ্ধতি,মরিচ গাছের রোগ,মরিচ চাষের আধুনিক পদ্ধতি,মরিচ গাছে সার প্রয়োগ,মরিচ গাছের কাটিং,টবে মরিচ গাছের যত্ন,মরিচ গাছের 5g কাটিং,টবে নাগা মরিচ গাছের যত্ন,বোম্বাই মরিচ গাছের যত্ন,মরিচ গাছের দ্বিগুণ ফলন,টবে মরিচ গাছের পরিচর্যা,মরিচ গাছের কাটিং পদ্ধতি,নাগা মরিচ গাছের পরিচর্যা,কীভাবে মরিচ গাছের যত্ন করবেন,কিভাবে মরিচ গাছের কাটিং করব
মরিচ গাছের যত্ন


মরিচ গাছের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারঃ

মরিচের ক্ষত (অ্যানথ্রাকনোজ) Anthrancnose of chilli রোগঃ Colletotrichum capsici নামক এক প্রকার ছত্রকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগ মরিচের অনেক ক্ষতিসাধন করে থাকে।

মরিচ গাছের নতুন ডগা ও ফুলের কুঁড়ি এই রোগে প্রথম আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ফুল প্রথমে নুইয়ে পড়ে এবং পরে শুকিয়ে ঝরে যায়।

রোগের প্রকোপ বেশি হলে ফলের বোঁটা থেকে রোগ ডাটায় সংক্রমিত হয়ে এবং গাছের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে মরিচের ডাল আক্রান্ত হলে মরিচের আগা হতে শুরু করে নিচের দিকে শুকিয়ে যায়।

আক্রাত গাছের বাকল প্রথমে বাদামি হয়ে যায় এবং পরে তাতে সাদা সাদা ডোরাকাটা দাগের সৃষ্টি হয়। রোগাক্রান্ত অংশে ছত্রাক কালো কালো কাঁটার মত সিটা (Seat) ও অসংখ্য এককোষী স্পোর উৎপন্ন করে।

প্রতিকারঃ

মরিচের এই রোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য সুস্থ ফল হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ এবং আশেপাশের আগাছা ধ্বংস এবং জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার করতে হবে।

জমিতে বীজ বপনের পূর্বে মারকিউরিক ক্লোরাইড (mercuric chloride) দ্বারা অথবা গরম পানিতে বীজ শোধন করে নিতে হবে। অথবা প্রোভেক্স/ ভিটাভেক্স ১% দ্বারা বীজ শোধন করতে হবে। ( প্রতি কেজি বীজ ২.৫ গ্রাম ছত্রাকনাশক) চারাগাছ মাটি হতে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং পরে ১০-১২ দিন অন্তর অন্তর ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি/ ৪ গ্রাম ব্লকপ/ ১ মিলি হেক্সাকোনাজল অথবা অন্য কোন কীটনাশক জমিতে ছিটিয়ে এই রোগ দমন করা যায়। বর্দোমিক্সার ( ১০০ গ্রাম তুঁতে, ১০০ গ্রাম চুন, ও ১০ লিটার পানি ) স্প্রে করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।


মরিচের পাতা কুঁকড়ানো রোগ (Leaf Curl of Chilli) : 

এটি ভাইরাসজনিত রোগ। ভাইরাস রোগ আক্রান্ত গাছের পাতা কুঁচকিয়ে যায় এবং গাছ বামনাকৃতির হয়। পাতার শিরা ও উপশিরাগুলি সবুজ কণাবিহীন হয়ে যায়। এই রোগে আক্রমণের ফলে গাছে ফল কম ধরে এবং তা বিকৃত ও ছোট হয়।

প্রতিকারঃ

আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে ফেলে নষ্ট করতে হবে।আশেপাশের পোষক উদ্ভিদ ধংস করতে হবে।রোগ প্রতিরোধী জাতের বীজ জমিতে বপন করতে হবে।ভাইরাসের বাহক পোকা সাদা মাছিকে বালাইনাশক দ্বারা দমন করতে হবে। যেমন- রগর, সানগর, টাফগর,ইমিডাক্লোরপ্রিড ( এডমায়ার, টিডো) ইত্যাদি।

ফিউজেরিয়াম উইল্ট (Fusarium wilt) বা মরিচের ঢলে পড়া রোগঃ 

এই রোগ ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে। Fusarium annuum নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে। এই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় নিচের পাতাগুলিকে ঝুলে পড়তে দেখা যায়। এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগেই কাণ্ডের গোড়ার গ্রন্থিগুলির যথেষ্ট ক্ষতিসাধন হয়ে যায়। যার ফলে গাছ খুব দ্রুত ঢলে পড়ে। পরে গাছের কচি কচি ডগাগুলি মরে বাদামি রং ধারণ করে। মাটির নিচ দিয়ে যে স্থান হতে পার্শ্বশিকড় গজায় তাঁর মধ্যে দিয়ে কাণ্ডে ছত্রাকের অনুপ্রবেশ ঘটে। ছত্রাক শিকড়কেও আক্রমণ করে বিধায় শিকড় নরম ও ভেজা মনে হয়। যেসব উঁচু জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই সেসব জমিতে এই সকল রোগ বেশি হয়।

প্রতিকারঃ

আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে ফেলে নষ্ট করতে হবে। সুস্থ গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ শোধন করতে হবে ( প্রতি কেজি বীজ ২ গ্রাম অটোস্টিন/নোইন বা ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স ২০০ wp দিয়ে )। চারা শোধন করতে হবে। (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম অটোস্টিন/নোইন বা ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স ২০০ wp দিয়ে )।


ব্যাকটেরিয়ার কারণে চারা শোধন করা ( ১ গ্রাম ষ্টেপ্টোমাইসিন সালফেট ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। ট্রাইকোডারমা ভিড়িড ( ৩-৪ গ্রাম/কেজি বীজ) দ্বারা বীজ শোধন করা। কপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম ০.২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন