১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বক্তব্য

বিজয় দিবস উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য 

বিজয় দিবসের বক্তব্য,বিজয় দিবস এর বক্তব্য,বিজয় দিবসের বক্তব্য,স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্য,বিজয় দিবস,বিজয় দিবস উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত কিছু বক্তব্য,১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের বক্তব্য,বিজয় দিবসের বক্তৃতা,১৬ ডিসেম্বর বক্তব্য,বিজয় দিবস উপলক্ষে বক্তব্য,১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের বক্তব্য,বিজয় দিবস উপস্থিত বক্তৃতা,বিজয় দিবস এর বক্তৃতা,বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যেভাবে বক্তব্য দিবেন,বিজয় দিবসের বক্তৃতা,বিজয় দিবস,বিজয় দিবসের উপস্থিত বক্তব্য,বিজয় দিবসের বক্তৃতা বা বক্তব্য
বিজয় দিবস উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে জানাচ্ছি বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।


মনে আমার ঝলসে ওঠে

একাত্তরের কথা,

পাখির ডানায় লিখেছিলাম-

প্রিয় স্বাধীনতা।


বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন আজ। আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস।আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদদের, স্মরণ করছি ৭১ লাখ মা বোনদের, যাদের জীবন সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙ্গালী জাতি বিজয় অর্জন করে। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে যে মহান বিজয় অর্জিত হয়েছে তা চির অম্লান। যুগ যুগ ধরে তা আমাদের জীবনে প্রেরণা দান করতে থাকবে। বীরের জাতি হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। স্বাধীনতার জন্য বাঙালিকে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে যে, পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ৎ হয়েছিল সেখানেও বাঙালিদের  ওপর নেমে এসেছিল  পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ-নির্যাতন। তবে  প্রথম আঘাত এসেছিল  আমাদের মাতৃভাষার ওপর। ১৯৫২ সালে বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে বাংলা মায়ের সন্তানেরা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলো। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে স্বাধিকার চেতনার স্ফুরণ ঘটেছিল, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কালক্রমে তা স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমবেত জনসমুদ্রে জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর এই ভাষণ জাতিকে অনুপ্রাণিত করে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়, অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এমতাবস্থায় বাঙালিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং অনেক স্থানেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা না করেই অনেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। সেই রাত থেকেই সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বাঙালি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর (২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন .পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়। পরবর্তিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাবার পর আপামর বাঙালি জনতা পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং ভারতের অবিস্মরণীয় সমর্থনের ফলস্বরূপ দীর্ঘ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে  ১৯৭১ সালের  সালের এই দিনে ঢাকার  সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পাকিস্তানিবাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ জন সদস্য বাংলাদেশ   ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্ম-সমর্পণ করে।   এর ফলে পৃথিবীর বুকে  বাংলাদেশের নামে   নতুন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুনভাবে চিহ্নিত হয় লাল- সবুজের এই প্রিয় -দ্বীপ।



বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের। একইসঙ্গে দিনটি স্বজন হারানোর বেদনায় অশ্রুসিক্ত। সবমিলিয়ে আজ আনন্দ-অশ্রুর  দিন। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। যে ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে তার মহান গৌরব এই দিবসটির সঙ্গে জড়িত থেকে একে জাতীয় জীবনে সীমাহীন প্রেরণার উৎস করেছে। এই বিজয় দিবস আমাদের গর্বের নিদর্শন।বাঙালি জাতি এই দিনের বিজয়ের সূত্রে বীর জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এই দিনেই স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঙালির জয়যাত্রা শুরু।


আমাদের কথাটি ভুলে গেলে চলবে না যে, সমগ্ৰ দেশবাসীর আকাঙ্ক্ষা আত্মত্যাগের ফলেই এই বিজয় সম্ভব হয়েছিল। স্বাধীনতা অর্জিত হলেই সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় না। স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল একরাশ স্বপ্ন বুকে  নিয়ে। পথপরিক্রমায় উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত  হয়েছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। নানা ধরণের  চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে স্বতন্ত্র  মহিমায়। 'বিজয়' শব্দটির সাথে যে স্বপ্ন একদা এদেশবাসী  দেখেছিলেন আজও তা বাস্তবে রূপায়িত করা সম্ভব হয়নি। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব, অসহিষ্ণুতা, রাজনৈতিক উগ্র উন্মাদনা, সামাজিক অবক্ষয়, সন্ত্রাস সংঘাতের সশস্ত্র বিক্ষোপ  আমাদের জাতীয় জীবনে নতুন উপসর্গরূপে দেখা দিয়েছে। সকল অপশক্তি দেশে এনেছে অশান্তি, বিশৃঙ্খলতা, রক্তক্ষয়ী সংঘাত, নিরপত্তাহীনতা। স্বাভাবিকভাবে মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি এই স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম? এই কি আমাদের ইতিহাস সভ্যতার মূলমন্ত্র | এভাবে কি আমরা শক্তিধর মহান জাতির অস্তিত্বকে তুলে ধরতে পারব? এভাবে কি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভোমত্ব  রক্ষা হবে? স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পর এখনো অসংখ্য লোক অশিক্ষা দারিদ্র্য কবলিত অবস্থায় রয়েছে। জনগণের জীবনের নিরঙ্গতা বিঘ্নিত হচ্ছে। বেকারত্নের জালে আবদ্ধ যুবক বেছে নিচ্ছে সন্ত্রাস আর ড্রাগের মরণনেশা। এক কথায় এখনো আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে অর্থবহ করে তুলতে পারিনি। আমরা বিজয় অর্জন করেছি, স্বাধীন দেশ পেয়েছি, কিন্তু তার তাৎপর্যের সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ঘটাতে পারি নি বলে দেশের জনগণের এখনো মুক্তি মেলে নি

আসুন সবাই মিলে জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আজকের দিনে এই হোক মহান বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন