কিডনি রোগ কেন হয় এবং কিডনি রোগ থেকে বাঁচার উপায়

 ২০১৭ সালের একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় সারা বিশ্বে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৯.৩ শতাংশ। যেটা অন ১৯৯০ সালে ছিল ৯.১ শতাংশ। খাদ্যে ভেজাল, পরিবেশ দূষণ আরো বিভিন্ন কারণে এইসব হচ্ছে।



কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কি করলে এবং কি না করলে আমরা আমাদের কিডনিকে ভালো রাখতে পারি সে সম্পর্কে জেনে নিন। হাতের মুষ্টির সমান শিমের বিচির আকৃতি বিশিষ্ট দুটি কিডনি আমাদের পিঠের পেছনদিকে খাঁচার নিচে অবস্থিত। কিডনির প্রধান কাজ গুলোর মধ্যে রয়েছে শরীর থেকে সম্পূর্ণ বর্জ্য অপসারণ করা, শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করা, লবণ ইলেক্ট্রোলাইট ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়াও কিডনি আমাদের দেহের ভিটামিন ডি একটিভ করে ভিটামিন ডি এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।




কিডনি রোগের লক্ষণ
কিডনি রোগ


কিডনি রোগ কেন হয় এবং এর কারণগুলো কিডনি রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি কারণ হলো অনিয়মিত উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই দুটি কারণে কিডনি দুর্বল হয়ে থাকে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ব্যথানাশক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার। সামান্য ব্যথার কারণে মানুষ দিনের পর দিন ব্যথানাশক ঔষধ খেতে থাকে যা কিডনি দুর্বল করতে অনেক দায়ী। কিডনি প্রদাহ সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না হলে এটা থেকেও কিডনি ডেমেজ হতে পারে। কিডনিতে দীর্ঘদিন পাথর জমা থাকলে বা অন্য কোনো ইনফেকশন থাকলে কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। গলাব্যথা, খোশ পাচড়া থেকেও কিন্তু কিডনি ডেমেজ হতে পারে। হঠাৎ করে অনেক বেশি বমি, ডায়রিয়া বা রক্তক্ষরণ থেকেও কিডনি সমস্যা হতে পারে।
যে লক্ষণগুলো দেখলে বুঝবেন কিডনি খারাপ হতে শুরু করেছে
কোন কারন ছাড়াই তীব্র শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করা। বমি ভাব বা বমি হওয়া চোখের চারপাশে, বিশেষ করে চোখের পাতা ফুলে যাওয়া ক্ষুধামন্দা এবং খাবারের স্বাদ কমে যাওয়া রক্তশূন্যতা দেখা দেওয়া ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ফেনাযুক্ত প্রস্রাব হওয়া। শরীর থেকে যদি প্রোটিন বেরিয়ে যায় তাহলে প্রস্রাব ফেনাযুক্ত হয়ে থাকে। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বা পুঁজ আসা সেইসঙ্গে জ্বর হওয়া কিডনিতে কোনো ইনফেকশন বা পাথর থাকলে পেটে ব্যথা হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেওয়া বা কারো যদি আগে থেকেই রক্তচাপ থেকে থাকে তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া। এছাড়াও আরো কিছু উপসর্গ রয়েছে, শরীরের চামড়া শুকিয়ে যাওয়া, চামড়ায় চুলকানি হওয়া ইত্যাদি। এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
কিডনি নিয়ে কিছু ভুল ধারনা

আমরা বেশিরভাগ মানুষই মনে করি কিডনি ভালো রাখতে হলে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। এটি কিন্তু একটি ভুল ধারণা। একজন সুস্থ মানুষ যার কোন কিডনি রোগ নেই, তার শরীর থেকে সব বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে মাত্র ৫০০ মিলিলিটার পানি যথেষ্ট। আর কারো যদি কিডনি রোগ থেকে থাকে তাহলে তার ক্ষেত্রে একই কাজ করতে প্রয়োজন হয় ১২০০ মিলিলিটার পানি। তাই উভয় ক্ষেত্রেই পিপাসা পেলে পানি খেলেই যথেষ্ট। দেড় থেকে দুই লিটার পানি যথেষ্ট। কোমর ব্যথা কখনোই কিডনি রোগের লক্ষণ নয়। পা ফুলে যাওয়া মানেই কিন্তু কিডনি সমস্যা নয়।


কি করলে এবং কি না করলে কিডনি ভালো রাখা যাবে
কিডনি ভালো রাখতে হলে কিডনি রোগের যে কারণগুলো রয়েছে বিশেষ করে, উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস মেডিসিন এবং জীবন যাপন পদ্ধতির পরিবর্তনের মাধ্যমে এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অতিরিক্ত লবণ এবং লবণযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া যাবেনা। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রক্তে কোলেস্টেরল বা চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ধূমপান কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর শুধু কিডনি না ধুমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন ৪৫ মিনিট করে হালকা ব্যায়াম করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম দৈনিক ৮ ঘণ্টা খুবই জরুরী।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন