জোয়ার ভাটা কেন সৃষ্টি হয়

আমাদের পৃথিবীপৃষ্ঠের চারভাগের তিন ভাগ অংশই পানি দ্বারা আবৃত। বিস্তৃত এই জলরাশির সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো জোয়ার ভাটাপৃথিবীর বাইরের মহাকর্ষীয় শক্তির প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের জল নিয়মিত বিরতিতে ফুলে ওঠা ও নেমে যাওয়াকে জোয়ার ভাটা বলে। জোয়ার ভাটার ফলে সমুদ্রে যে ঢেউ এর সৃষ্টি হয় তাকে বলে জোয়ার তরঙ্গ। আমাদের গ্রহের প্রাকৃতিক পরিবেশ এর জন্য জোয়ার ভাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া।


জোয়ার ভাটা সৃষ্টির পিছনে দেড়শত বিষয় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। তবে তার মধ্যে তিনটি বিষয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো চাঁদ, সূর্য এবং আমাদের পৃথিবী। এই তিনটি মহাকাশীয় বস্তুর পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ওপর জোয়ার ভাটা নির্ভরশীল। তবে জোয়ার ভাটা সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা চাঁদের। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ সালে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার জ্যোতির্বিদ সেলিউকাস সর্বপ্রথম ধারণা করেছিলেন যে জোয়ার ভাটা সৃষ্টির পিছনে চাঁদের অবদান আছে। 


জোয়ার ভাটা,মুখ্য জোয়ার,গৌণ জোয়ার,শুক্লপক্ষ,কৃষ্ণপক্ষ,মরা কটাল,মরা জোয়ার,গৌণ জোয়ার,জোয়ার ভাটা কেন হয়,জোয়ার ভাটার কারণ,কিভাবে ঘটে জোয়ার ভাটা,jowar
জোয়ার ভাটা

পৃথিবী এবং চাঁদের ঘনিষ্ট অবস্থানের ফলে এই দুইটি বস্তু একে অপরের দিকে টানতে থাকে। এই বল আমাদের পৃথিবীর কঠিন বস্তুসমূহের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও তরলের ওপর বেশ কার্যকর হয়। চাঁদের আকর্ষণে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি চাঁদের দিকে খানিকটা সরে যায় এবং তখনই জোয়ার এর সৃষ্টি হয়। ঠিক একই সময় চাঁদের বিপরীত পাশে মহাকর্ষ শক্তি কমে যাওয়ার কারণে সেখানে পানি ফুলে উঠে জোয়ারের শুরু হয়। চাঁদের দিকে শুরু হওয়া জোয়ারকে বলা যায় মুখ্য জোয়ার এবং চাঁদের বিপরীত দিকে যে জোয়ার হয় তাকে বলে গৌণ জোয়ার। আর এই জোয়ারের সময় পৃথিবীর বাকি দুইদিকে সমুদ্রের জলস্তর নেমে যাওয়াকে বলে ভাটা। জোয়ার ভাটার খেলায় চাঁদের প্রভাব সবসময় একই রকম থাকে।


কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় যখনই সূর্যের প্রভাব পরে তখন জোয়ার ভাটায় বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সূর্যের অবস্থানের কারনে জোয়ার কখনো প্রকট হয় আবার কখনো তীব্রতা হারায়। যখন চাঁদ, সূর্য আর পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে তখন অধিক মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় তীব্র জোয়ার হয়। একে তেজ কটাল / ভরা কটাল বা ভরা জোয়ার বলা হয়। অমাবস্যা ও পূর্ণিমার রাতে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে ভরা জোয়ার দেখা যায়। ভরা কটাল এর বিপরীত দশা হলো মরা কটাল। মরা কটাল বোঝার আগে কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষ সম্পর্কে জানতে হবে। অমাবস্যার পরের ১৫ দিনে চাঁদ যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তাকে বলা হয় শুক্লপক্ষ এবং পূর্ণিমার পরের ১৫ দিন চাঁদ যখন ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকে তাকে বলে কৃষ্ণপক্ষ। শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষের মাঝামাঝি অর্থাৎ অষ্টম রাত্রিতে চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবী পরস্পর সমকোণ এ থাকে। সে কারণে চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ বল বিপরীত দিকে কাজ করে ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের জলরাশি খুব বেশি ফুলে উঠতে পারেনা। আর এভাবে সৃষ্টি হওয়া দুর্বল জোয়ার কে মরা কটাল বা মরা জোয়ার বলে। মহাকর্ষ বলের প্রভাব ছাড়াও উপকূলের ধরণ, উপসাগর, মোহনা, স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ এবং আবহাওয়া জোয়ার ভাটার ওপর অত্যন্ত ক্রিয়াশীল।


সমুদ্রতলের ভুমিরূপের পার্থক্যের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জোয়ার ভাটার উচ্চতায় পার্থক্য দেখা যায়। জোয়ারের পানি উপকূলের দিকে অগ্রসর হলে জল সমতলের যে উত্থান ঘটে তাকে বলে জোয়ারের জলের সর্বোচ্চ সীমা এবং ভাটার পানি সমুদ্রের দিকে নেমে যাওয়ার সময় জল সমতলের যে পতন ঘটে তাকে বলে জোয়ারের জলের সর্বনিম্ন সীমা। যেকোনো উপকূলীয় এলাকায় দুইবার জোয়ার এবং দুইবার ভাটা দেখা যায়। কোনো স্থানে মুখ্য জোয়ারের ৬ ঘন্টা ১৩ মিনিট পর সেখানে ভাটা হয় এবং মুখ্য জোয়ারের ১২ ঘন্টা ২৬ মিনিট পর সেই স্থানে গৌণ জোয়ার হয়। জোয়ার ভাটার মতোই আমাদের গ্রহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক প্রক্রিয়া আগ্নেয়গিরি। বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে প্রায় দেড় হাজার সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন