পুদিনা পাতা খাওয়ার উপকারিতা

পুদিনা পাতার অজস্র গুণ রয়েছে। পুদিনা পাতা যেমন সুগন্ধি হিসেবে রান্নায় ব্যবহার করা হয় ঠিক একই ভাবে পুদিনা কিন্তু জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করে। কাশি, অরুচি ও পাকস্থলীর প্রদাহে এই গাছের পাতা বিশেষ উপকারে আসে। পুদিনা পাতার চা গোটা বিশ্বেই এক অত্যন্ত জনপ্রিয় পানীয়। এছাড়া পুদিনা পাতা রূপচর্চাতেও ব্যবহৃত হয়। বিভিন প্রসাধনী এবং খাবারে এক বাক্যে রিফ্রেশমেন্ট তৈরি করে এই পাতা। পুদিনা পাতার ঔষধি গুণের কারণে একে এন্টি সেপটিক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। চলুন পুদিনা পাতার নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে একটু জেনে নেই।



পুদিনা আপনার যেকোনো হজমের সমস্যায় দারুন ভাবে কাজে আসে। পুদিনা পাতার এক ধরণের সক্রিয় তেল থাকে, যা মেন্থল নামে পরিচিত। এই মেন্থলের বেশ কিছু এন্টি সেপটিক এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা বদহজম উপশম করে, হজম শক্তিকে বাড়ায়, মুখের অরুচি ও গ্যাসের সমস্যা দূর করে, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে ভিতর থেকে ঠান্ডা রাখে। ফলে যারা হজমের সমস্যা এবং পেটের ব্যথা কিংবা পেটের অন্যান্য সমস্যায় ভুগে থাকেন তারা খাবার পর এককাপ পুদিনা পাতার চা খাবার অভ্যেস করুন। 



পুদিনা পাতা,পুদিনা,পুদিনা পাতার গুনাগুন,পুদিনা পাতার গুণাগুণ,পুদিনা পাতা চাষ পদ্ধতি,টবে পুদিনা পাতা চাষ পদ্ধতি,পুদিনা পাতার রেসিপি,পুদিনা পাতার চা,পুদিনা পাতার ভর্তা,পুদিনা পাতার ১০ টি গুণ,পুদিনা পাতার ব্যবহার,পুদিনা পাতার উপকারিতা,পুদিনা পাতার উপকারিতা কি,পুদিনা পাতা খেলে কি হয়,মাথা ও পেট ব্যথা নিরাময়েও পুদিনার পাতা খুব উপকারী,পুদিনা পাতার চাষ পদ্ধতি,পুদিনা পাতার শরবত রেসিপি,পাতা,ক্যান্সার প্রতিরোধে পুদিনা পাতা,পুদিনা পাতা চাষ,পুদিনা পাতার
পুদিনা পাতা

ছয় থেকে সাতটি পুদিনা পাতা গরম জলে ফুটিয়ে তার মধ্যে সামান্য মধু মিশিয়ে খুব সহজেই পুদিনা পাতার চা তৈরি করে দিনের মধ্যে এক থেকে দুইবার পান করলে বিশেষ ভাবে উপকৃত বোধ করবেন। হাঁপানি বা এজমা রোগীদের ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা শ্বাসকষ্টের সমস্যা উপশমে এক বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। পুদিনায় রোসমেরিনিক এসিড নামে এক ধরণের এন্টি অক্সিডেন্ট এবং এন্টি ইনফ্লেমটরি উপাদান রয়েছে। হাঁপানি রোগীরা পুদিনার বাষ্প নাক দিয়ে গ্রহণ করলে শ্বাসকষ্টের উপশম হবে। পুদিনা পাতায় থাকা বিরোধী প্রদাহ জনক বৈশিষ্ট্য রোগীর গলায় এবং শ্বাসনালীর ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করবে এবং রোগীকে স্বস্তি দেবে।



পুদিনা মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেন জনিত সমস্যাকে দূর করে। পুদিনা পাতায় থাকা একটি বিশেষ উপাদান মেন্থল মাথা ব্যথা এবং মাইগ্রেন জনিত যাবতীয় সমস্যাকে দূর করতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। পুদিনাকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে একটি অতি শক্তিশালী এডাপ্টজেনিক ঔষধি হিসেবে অভিহিত করা হয়। ভেষজ বিদ্যায় এডাপ্টজেনিক কথাটির অর্থ হলো এমন এক ধরণের প্রাকৃতিক উপাদান যা মানুষের শরীরকে যেকোনো ধরণের মানসিক চাপের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। মাথা ব্যথা ও তীব্র মাইগ্রেন এর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কয়েকটি পুদিনা পাতা থেকে রস বের করে নিয়ে আপনার কপালের আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন। দেখবেন মাত্র দু থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই আপনার মাথা ব্যথা জনিত যাবতীয় সমস্যা দূর হবে।



এছাড়া দিনে দুবার পুদিনার চা পান করলেও আপনার মাথা ব্যথা দূর হবে। পুদিনা ত্বকের যেকোনো সংক্রমণকে ঠেকাতে এন্টি বায়োটিক এর কাজ করে। ১০ থেকে ১৫টি শুকনো পুদিনা পাতা ফুটিতে পুদিনার জল তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিন।  এক বালতি জলে ১৫ চামচ পুদিনার জল মিশিয়ে স্নান করুন। এর ফলে গরমকালে শরীরে ব্যাকটেরিয়া জনিত বিশ্রী দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই পাবেন কেননা পুদিনার এস্ট্রিনজেন্ট গুণ অতুলনীয়।  আপনার ঘামাচি বা কোনো ধরণের স্কিন এলার্জি হবে না। শরীরের বাড়তি মেদ বা ওজন ঝরিয়ে ফেলতে পুদিনার এক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পুদিনা খাদ্য হজমে সহায়ক এনজাইম গুলোকে উত্তেজিত করে তোলে যা খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষনে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে এবং এর ফলে শরীরের মেটাবলিজম রেট বেড়ে যায় যা শরীরের ওজন হ্রাস করতে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে। শরীরের বাড়তি মেদ বা ওজনকে প্রাকৃতিক ভাবে ঝরিয়ে ফেলতে চাইলে প্রতিদিন অন্তত একগ্লাস পুদিনার জুস খাবার অভ্যেস করুন।



পুদিনা শেকড়ের রস এবং পাতা উকুননাশক হিসেবে খুবই কার্যকরী। পুদিনার পাতা বা শেকড়ের রস চুলের গোড়ায় লাগান। এরপরে একটি পাতলা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। এক ঘন্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুইবার এই হোম রেমিডিটি ফলো করুন তাহলেই দেখবেন এক মাসের মধ্যেই চুল হবে উকুনমুক্ত। পুদিনা ব্রেইন পাওয়ারকে উন্মুক্ত করে। গবেষণায় প্রমাণিত যে পুদিনা পাতার চা বা তেল পান করলে আমাদের মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি পায়।  পুদিনা মানসিক সচেতনতাকে উন্নত করতে সহায়তা করে। পুদিনা পাতায় থাকা মেন্থল আমাদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলকে উত্তেজিত করে যা মানসিক স্বচ্ছতা ও স্মৃতিশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। পুদিনা রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহকে অনেকাংশেই বাড়িয়ে তুলে ফলে আমাদের ব্রেইনে বেশিমাত্রায় অক্সিজেন পৌঁছায় এবং এর ফলে আমরা আমাদের কাজে আরো বেশি মনোযোগী হয়ে উঠতে পারি।



নিয়মিত পুদিনা পাতা খেয়ে যেতে পারলে নিশ্চিত ভাবেই আমাদের স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটবে। ত্বকের যত্নে ও চিকিৎসার জন্যে পুদিনার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। পুদিনা পাতায় শক্তিশালী এন্টি ইনফ্লেমটরি এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ব্রণ প্রবন ত্বকে আশ্চর্য রকম কাজ করে। পুদিনা পাতায় উচ্চমাত্রায় স্যালিসিলিক এসিড থাকে যা খুব দ্রুত ব্রণ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতার রস মুখের ত্বকে লাগালে ত্বক পরিষ্কার হয়। পুদিনায় থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেলস এর পরিমাণ কমিয়ে ত্বককে করে তুলে অনেক বেশি ফর্সা ও উজ্জ্বল। মুখের ত্বককে ভালো রাখতে আপনি ইচ্ছা করলে ফেসমাস্ক হিসেবে পুদিনা ব্যবহার করতে পারেন। এজন্যে কয়েকটি কাঁচা পুদিনা পাতার সঙ্গে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে আপনার মুখের ত্বকে প্রয়োগ করুন এবং কুড়ি মিনিটের জন্যে রেখে দিন। কুড়ি মিনিট বাদে হালকা উষ্ণ জল দিয়ে নিজের মুখ ধুয়ে ফেলুন। পুদিনা পাতার রস উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত পুদিনা পাতার রস খেলে আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে পুদিনা পাতা। ব্যাকটেরিয়ার কারণে অনেকসময় আমাদের মুখে দুর্গন্ধ হয়। পুদিনা পাতা সেই দুর্গন্ধ দূর করে। এটি জিভ, দাঁত ও দাঁতের মাড়িকে সুস্থ রাখে।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন