ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করাই কি সবকিছু

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো মানুষের চিন্তাশক্তি এবং জ্ঞানের দিগন্ত প্রসারিত করা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ সহ সমগ্র পৃথিবীতেই মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় শুধু ডিগ্রি অর্জন করার জন্যে। যার সাহায্যে তারা একটি ভালো চাকরি পেতে পারে। আধুনিক যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম মানুষকে না প্রকৃত জ্ঞান চর্চার সুযোগ দিচ্ছে না চাকরির জন্য দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারছে। সে কারণেই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন। বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর পৃথিবীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি কেন মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।


শুধু বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, সমগ্র পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোই বর্তমান মানবজাতির প্রয়োজন অনুযায়ী কাজে আসতে পারছেনা। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয়। সফল এই উদ্যোক্তা আরো মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় শুধু তদারকি করে শিক্ষার্থীরা সময়মতো তাদের এসাইনমেন্ট শেষ করতে পারছে কিনা। ছাত্র ছাত্রীরা বিষয়গুলো ভালো ভাবে শিখছে কিনা সেখানে মুখ্য বিষয় নয়। ইলন মাস্ক বলেন বিশ্ববিদ্যালয় হলো সমবয়সীদের একসাথে মিলেমিশে মজা করার জায়গা। অথচ তাদের এই সময়টাতে সরাসরি কোনো কাজে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। সিলিকন ভ্যালির কিংবদন্তি বিনিয়োগকারী ও পেপাল এর সহকারী প্রতিষ্ঠাতা পিটার থিল মনে করেন সকল ধরণের বিশ্ববিদ্যালয় বর্জন করা উচিত, কারন উচ্চশিক্ষা মূলত এক ধরণের ব্রেইনওয়াশিং। ইউনিভার্সিটি ড্রপ আউট বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে যারা নিজের কোম্পানি তৈরি করছে তাদেরকে পিটার থিল একটি ফেলোশিপ প্রদান করেন। এই ফেলোশিপের উদ্যোক্তাদের ১ লক্ষ ডলার বা ৮৫ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়।



ki keno kivabe,kikenokivabe,Bangla Infotainment,Infotainment,কি কেন কিভাবে,কিকেনকিভাবে,Bangla Documentary,University Degrees are Becoming Worthless,বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী কেন মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে,education,bangladeshi university,বিশ্ববিদ্যালয়,বাংলাদেশী বিশ্ববিদ্যালয়,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি,ব্রাক ইউনিভার্সিটি,ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
বিশ্ববিদ্যালয় 



বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি এপল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির চেয়ে কর্মীর দক্ষতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক জানান, এপলের কর্মীর অর্ধেকের চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নেই। এমনকি এপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা করেছিলেন মাত্র এক সেমিস্টার। স্টিভ জবসের মতো আরো বহু সফল উদ্যোক্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা বাদ দিয়েছিলেন। বলতে গেলে তারাই আজকের বিশ্বব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছে। মাইক্রোসফট এর প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা ছেড়ে নিজের কোম্পানি তৈরিতে মনোযোগ দিয়েছিলেন। ফেসবুকের উদ্যোক্তা মার্ক জাকারবার্গ ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ড্যানিয়েল এক সুইডেনে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বাদ দিয়ে স্পটিফাই প্রতিষ্ঠা করেছেন। যারা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে নিজের কোম্পানি গড়ে তুলেছেন ইলন মাস্ক তাদের তারিফ করে। এমনকি তিনি নিজেও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে গিয়ে মাত্র দুইদিন পরেই পিএইচডি ছেড়ে দেন। তার চেয়েও মজার বিষয় হলো, ইলন মাস্ক বলেছেন তার সাথে কাজ করার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি বাধ্যতামূলক নয়। তার পরিচালিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্পেসএক্স, টেসলা, নিউরালিঙ্ক, বোরিং কোম্পানির মতো বেশ কয়েকটি বর্তমান এবং ভবিষ্যত পৃথিবীর শীর্ষ কোম্পানি রয়েছে।


করোনা মহামারীর মধ্যে গুগল একটি নিজস্ব অনলাইন স্কুল খোলার ঘোষণা দিয়েছেন। গুগলের এই স্কুলে ডেটা এনালাইসিস, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন কোর্স শেখানো হবে। এই কোর্স গুলো বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।

গুগলে চাকরির ক্ষেত্রে মাত্র ছয় মাসের এসব অনলাইন কোর্স চার বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির সমান মর্যাদা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। গুগলের ছয় মাসের অনলাইন কোর্স করতে একজন শিক্ষার্থীর খরচ হবে মাত্র ২৩৪ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যা ২০ হাজার টাকা মাত্র। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের বই খাতা সহ শিক্ষা উপকরণ কিনতেই এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যায়। গুগলের কোর্সধারীরা প্রতিমাসে সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং বছরে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা বেতনের চাকরির সুযোগ পাবে। বর্তমান চাকরির বাজারে যে বিষয় গুলো সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তার খুব কম বিষয়ই পড়ানো হয়। আমরা মনে করি আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থা অনেক উন্নত। তাই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা হয়তো অনেক এগিয়ে থাকে। কিন্তু বিষয়টি মোটেও সেরকম নয়। ডিজিটাল টেকনোলজি সমস্যা সমাধানে আমেরিকার অবস্থান ১৮ নম্বরে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ফিনল্যান্ড, সুইডেন এবং সিঙ্গাপুর। গাণিতিক সমস্যা সমাধানে আমেরিকার অবস্থান ২৭ তম। এই ক্ষেত্রে শীর্ষ দেশ গুলো হলো জাপান, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন।


একাধিক ভাষায় দক্ষতা যেমন মানুষকে চাকরির বাজারে এগিয়ে রাখে ঠিক তেমনি কোডিং এর দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিকে শীর্ষ বহুজাতিক কোম্পানি গুলো চাকরির ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয় কারন কোডিং এর জ্ঞান মানুষের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ায়। এপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক মনে করেন হাই স্কুলের লেখাপড়া শেষ করার আগে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কোডিং শেখা উচিত। শিশু শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবাইকে কোডিং শেখানোর জন্যে ২০১৬ সালে এপল একটি প্রোগ্রাম ও চালু করেছিল। বর্তমান বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা প্রযুক্তি দানব প্রতিষ্ঠান গুলোর যাত্রা শুরু হয়েছিল কোনোনা কোনো কোডিং জ্ঞানের মধ্য দিয়ে। বর্তমানেও কোডিং শিখে এমন সব চাকরি পাওয়া সম্ভব যা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি দিয়ে কখনোই অর্জন সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি বেশিরভাগ দেশেই অনেক ব্যয়বহুল। আমেরিকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গড়ে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা খরচ হয়। বাংলাদেশেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে কমপক্ষে ৫ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্রপ্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকা সরকার থেকে ভর্তুকি দেয়া হয়। সে কারণে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ১৯ গুণ বেশি। এছাড়াও তথাকথিত প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার খরচ আকাশচুম্বী। এই বিপুল অর্থ যোগান দিতে বাংলাদেশে অভিভাবক দের নাভিশ্বাস উঠে যায়। অন্যদিকে আমেরিকানরা প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ এডুকেশন লোন বা শিক্ষা ঋণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এবং পরবর্তীতে এসব ঋণ পরিশোধ করতেও গ্রাজুয়েটদের হিমশিম খেতে হয়।


আরও পড়ুন - Top 10 Private University in Bangladesh for Law


বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির বিপক্ষে নানান মত থাকলেও এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার অনেক কারণ অবশিষ্ট রয়েছে। বহু বিষয়ে গবেষণার জন্যে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় গুলো প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। বিশ্বব্যাপী এই আলোচনা তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা বাদ দেয়ার জন্যে নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিতে আরো যুগোপযোগী শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্যে। বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি অপ্রাসঙ্গিক হবার পেছনে বিশ্বের শীর্ষ নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়ী করা হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা তো যাচ্ছেতাই। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ঢাকা শহরের পাড়া মহল্লায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছে ঠিকই কিন্তু এগুলোতে শিক্ষার মান তলানিতেই রয়েছে। বাংলাদেশ এর বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও নেই। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন কলেজে শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করলেও খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনই এর মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েশন শেষে সরকারি চাকরি বা বিসিএস এর জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। মজার ব্যাপার হলো বিসিএসের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা কোনো কাজে আসেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি গ্রাজুয়েটদেরকে চাকরিও দিতে পারেনা আবার উদ্ভাবক বা উদ্যোক্তাক তৈরি করতে পারছেনা। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি এক অলঙ্কারিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে যার ফলে বিশ্বজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন