অ্যামেক্স কোম্পানির সফলতার গল্প

গ্লোবালি কার্ড নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারদের মধ্যে VisaMasterCard এবং AMEX সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম। কিন্তু বিশ্বজুড়ে ভিসা ও মাস্টার কার্ডের ইস্যুকৃত কার্ডের সংখ্যা যেখানে যথাক্রমে ৩.৭ মিলিয়ন এবং ২.৩২ মিলিয়ন  সেখানে  অ্যামেক্সের  ইস্যুকৃত কার সংখ্যা মাত্র ১২১.৭  মিলিয়ন। যার প্রেক্ষিতে ট্রানজেকশন অ্যামাউন্টের  দিক থেকেও অ্যামেক্সভিসা কিংবা মাস্টারকার্ড দুটি থেকে বেশ পিছিয়ে। কিন্তু এর পরও রেভিনিউ অ্যাসেটের  দিক থেকে আমেক্স  ভিসা ও মাস্টার কার্ড দুটি  থেকেই বেশ এগিয়ে। ২০২১ সালে  অ্যামেক্সের ৪২.৩৮  বিলিয়ন ডলার রেভিনিউর বিপরীতে ভিসা ও মাস্টার কার্ডের রেভিনিউ ছিল ৩২.৫  এবং ১৯.৯ বিলিয়ন ডলার।  কিন্তু ভিসা ও মাস্টার কার্ডের তুলনায় ইস্যুকৃত কার্ডের দিক থেকে এত পিছিয়ে থাকার সত্বেও অ্যামেক্স কীভাবে এত বেশি স্কাসেসফুল


american express,american express platinum card,american express platinum,american express black card,american express card,american express vs visa,american express platino,american express gold card,american express credit cards,american express kreditkarte,american express centurion card,american express adds new benefits,american express membership rewards,#american express,american express uk,american express tpc,american express oro
AMEX 

 

ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের কাছে ভিসা, মাস্টার কার্ড বা আমেরিকান এক্সপ্রেস বেশি পরিচ  কিছু না। এই কোম্পানিগুলো মূলত বিশ্বব্যাপী অপারেটিং কার্ডগুলো নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার। তবে ভিসা এবং মাস্টার  কার্ডের মত কম্পিটটদের তুলনায় আমেরিকান এক্সপ্রেস কিছুটা ভিন্ন। এর বিশেষত্ব হল এটি একই সাথে নেটওয়ার্ক প্রভাইডার  এবং কার্ড  ইস্যুয়ার দুটোই। এটি মূলত একটি মাল্টিন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইড ইন কম্পানি। যা মূলত ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড,  চার্জ  কার্ড  এবং প্রিপেইড কার্ড ইস্যু এবং ফিনান্সিয়াল ট্রানস্যাকশন নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রভাইড করে থাকে।  


বিশ্বের ২০০ টির বেশি দেশ ও অঞ্চলের ভিসা ও মাস্টার কার্ডের সার্ভিস পাওয়া গেলেও। আমেরিকান এক্সপ্রেস বিশ্বের মাত্র ৯৪টি দেশ ও  অঞ্চলে তাদের সার্ভিস প্রোভাইড করে থাকে। যার প্রেক্ষিতে কার্ড ইস্যুর সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে অ্যামেক্সের   তুলনায় মাস্টারকার্ডের ১৯ গুন এবং ভিসার ৩০ গুণেরও বেশি কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ট্রানজেকশনের দিক থেকেও ভিসা ও মাস্টার কার্ড অ্যামেক্সের তুলনায় বেশি এগিয়ে। ২০২১ সালে  অ্যামেক্সের  টোটাল ট্রানজেকশন অ্যামাউন্ট ছিল  ১.২৮ ট্রিলিয়ন ডলার।  এর বিপরীতে ভিসা ও মাস্টার কার্ডের ট্রানস্যাকশন অ্যামান্ট ছিল যথাক্রমে  ১৩ ও ১.৭৫  ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু এর পরও ২০২১ সালে  অ্যামেক্সের রেভিনিউ মাস্টার কার্ডের রেভিনিউর তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এমন কি ভিসার চেয়েও অ্যামেক্স বেশি রেভিনিউ জেনারেট  করেছে। ইনফ্যাক্ট  রেভিনিউর  দিকে অ্যামেক্স সবসময়ই ভিসা ও মাস্টার কার্ড  থেকে এগিয়ে ছিলো।


কম্পিটিটরদের তুলনায় আমেরিকান এক্সপ্রেসের বিজনেস মডেল বেশ অনেকটাই ভিন্ন। Oxfam এর  একটি তথ্যসূত্রের বিশ্বের মাত্র ১% ধনী ব্যক্তি  বিশ্বের ৯৯% সম্পদ হোল্ড করে। এ বিষয়টি কনসিডার করে অ্যামেক্সের বিজনেস মডেলটি সাজানো হয়েছে। ফলে কম্পানিটি  সাধারণত  বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের টার্গেট করে থাকে।যদিও বিশ্বব্যাপী অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইউজারদের কিল্ক টাচ্ হিসাবে কনসিডার করা হয়। গ্লোবালি অ্যামেক্স মূলত হাই স্পেন্ডার এবং এক্সেলেন্ট ক্রেডিট রেটিং আছে এমন ইউজার। যেমন বিজনেস ম্যান , বিভিন্ন কোম্পানির হাইয়ার অফিশিয়ালদের  টার্গেট করে থাকে। 

কম্পানিটি মেইন  কম্পিটিটর ভিসা এবং মাস্টার কার্ড মূলত ইস্যু করা ক্রডিট কার্ড থেকে ইউজারের আউটস্ট্যান্ডিং  ডিউ ব্যালেন্সের  উপর ইন্টারেস্ট চার্জ করার  মাধ্যমে রেভিনিউ জেনারেট করে।  ইয়াহু! ফাইন্যান্সের একটি তথ্যসূত্রে  ইউএসএর  ৫৫% ইউজারি   তাদের ক্রডিট কার্ডে ডিউ পেয়েবল ব্যালেন্স  এক মাস থেকে অন্য মাস  পর্যন্ত  কেরি করে। যা কার্ড কোম্পানি গুলোর জন্য ইন্টারেস্ট মানি  আর্ন করার  একটি লুক্রেটিভ বিজনেস। যার প্রেক্ষিতে কোম্পানি দুটির টার্গেটই  থাকে নতুন নতুন ইউজারদের ওনবোর্ড করা। কিন্তু অ্যামেক্সের মূল রেভিনিউর বেশিরভাগই আসে মার্চেন্টের  কাছ থেকে। প্রতিটি ট্রানস্যাকশন প্রসেসিং ফি এবং ইউজারদের কাছ থেকে কার্ডের অ্যানুয়াল ফির  মাধ্যমে‌ বিশ্বব্যাপী  ভিসা এবং মাস্টার কার্ড ট্রানজেকশনের অ্যামাউন্টের ১.৩৪ শতাংশ থেকে ২.৭৪ % চার্জ করে সেখানে ১.৬৮%   থেকে ৩.৫৫ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ করে থাকে। যা মার্চেন্টদের পে করতে হয়। যদিও  অন্যদের তুলনায়  অ্যামেক্স মার্চেন্টদের থেকে বেশি চার্জ করে। তবে যেহেতু অ্যামেক্স ইউজারদের  বেশিরভাগই হাইয়ার স্পেনডার ক্যাটাগরির সেহেতু মার্চেন্টেদের অ্যামেক্স কার্ড  একসেপ্ট করতে হয়।২০২০ সালের শুধুমাত্র ইউএসএতে ৩৪৩ মিলিয়ন ভিসা ক্রেডিট কার্ড এবং ২৪৯ মিলিয়ন মাস্টার কার্ড ক্রেডিট কার্ড থেকে পেমেন্টের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১.৯৭  ট্রিলিয়ন ডলার এবং  ৮৩৭ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে একই বছর  ইউএসএ হতে মাত্র ৫৪ মিলিয়ন আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিটত কার্ড থেকে পেমেন্টের পরিমাণ  ছিল ৬৯৩  বিলিয়ন ডলার।  তার মানে ২০২০ সালে প্রতিটি ভিসা  এবং মাস্টার কার্ডের ক্রেডিট কার্ড গড়ে যথাক্রমে ৫৭৪৩ ও ৩৩৬১ ডলার পেমেন্ট রিসিটড জেনারেট করে। সেখানে একই বছর আমেক্স ক্রেডিট কার্ড  গড়ে ১২৮৮১ ডলার পেমেন্ট  পেমেন্ট রিসিট জেনারেটর  করে। আর স্পেন্টসেন্ট বিজনেস মডেলটি অ্যামেক্সের   সফলতার একটি প্রধান কারণ। যাত্রার শুরু থেকে  আমেরিকান এক্সপ্রেস  তাদের কার্ডকে ঘিরে আইকনিক এক্সক্লুসিভিটি ইমেজ ক্রিয়েট করেছে। 


১৯৫৮ সালে লঞ্চ করা অ্যামেক্সে লঞ্চ করা প্রথম কার্ডটির অ্যানুয়াল ফি ৬ ডলার রাখা হয়। যা ছিল তৎকালীন মার্কেট ডিমিনেট করা ডাইনার্স করা  কার্ডের তুলনায় এক ডলার বেশি ভূমিকা। যা অ্যামেক্সের  এক্সক্লুসিভ ইমেজ ক্রিয়েশনে ভূমিকা রেখেছে। নিজেদের এই এক্সক্লুসিভিটি ধরে রাখতে  পরবর্তী  বছরই অ্যামেক্স মার্কেটে সর্বপ্রথম কাগজের কার্ডের পরিবর্তে প্লাস্টিক কার্ড ইন্ট্রিডিউস  করে। এছাড়াও অ্যামেক্স তাদের এসক্লুসিভিটি  ইমেজ বজায় রাখতে একে একে গোল্ড, প্লাটিনাম ও সেঞ্চুরিয়ান কার্ডের মতো হাইয়ারডিয়ার কার্ডও ইন্ট্রোডিউস করেছে। কোম্পানিটির প্লাটিনাম ও সেঞ্চুরিয়ান কার্ডগুলো  মূলত ইনফাইট ওনলি কার্ড যা  শুধুমাত্র এক্সপ্লাইন ক্রেডিট হিস্টরি আছে। এমন হাই স্পেন্ডারদেকে  অফার করা হয়। এ ধরনের এক্সক্লুসিভিটির  কারণে অ্যামেক্সের ব্যান্ড ইমেজ আরো স্টরং  হয়েছে। 


যার ফলে বিজনেস ম্যান ও হাই স্পেন্ডার কাস্টমাদের কাছে আমেক্স কার্ডও বেশ লুক্রেটিভ। এধরনের কাস্টমারদের কাছে অ্যামেক্সর  প্লাটিনাম কিংবা  সেঞ্চুরিয়ান কার্ড গুলো হোল্ড করা অনেক ক্ষেত্রে   লিমিটেড এডিসন কার্ডে হোল্ড করার মত প্রেস্টিজিয়াস। অ্যামেক্স ব্যান্ডটিকে ঘিরে  যে ধরনের ইমেজ ক্রিয়েট করেছে এবং অ্যামেক্সের  ইউজার বেজের  কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে কাস্টমার সার্ভিসে দিকে বেশ গুরুত্ব দিতে হয়। তাই অ্যামেক্স ইউজারদের ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস দেওয়ার পাশাপাশি সবসময় ইউজারদের যেকোনো  সমস্যা সমাধানের এক্সট্রা মাইল যাওয়ার চেষ্টা করে। অ্যামেক্সের ইউজার সংখ্যা যেহেতু কম। তাই  কম্পানিটি   খুব সহজে কাস্টমারদেরকে কম্পিটরদের   তুলনায় সুপিরিয়র কাস্টমার সার্ভিস প্রভাইড করতে পারে।কাস্টমার সার্ভিস ইমপ্রুভমেন্টের জন্য প্রতিষ্ঠানটি এমপ্লয়ীদের ট্রেনিং ও মোটিভেশনের পাশাপাশি কাস্টমার ফিডব্যাক এবং প্রিভিয়াস রিভিউ এনালাইসিস করে করে তাদের সার্ভিস কোয়ালিটি ইনসিউর করে। ভিসা বা মাস্টার কার্ডসহ অন্যান্য ক্রেডিট কার্ড কম্পানির মতো অ্যামেক্সের প্রায়  সব ধরনের মেম্বারশিপ প্রিভিলেজ রয়েছে।  


এর বাইরে অ্যামেক্স যেকোনো প্রডাক্ট প্যাচেজে এক্সটেন্ডেড ওয়ারেন্টি , প্যাচেজ প্রোটেকশন , রিটার্ন প্রোডাকশন এবং ইন্টারাপশন ইন্সুরেন্সের মত  কিছু স্পেশাল মেম্বারশিপ প্রিভিলেজ  অফার করে। যা কোম্পানিটির  প্রায় সকল ধরনের কার্ড হোল্ডারদেরই প্রভাইড করা হয়। তবে  অ্যামেক্সের প্লাটিনাম কার্ডের কনসেপ্ট সার্ভিস কোম্পানিটির মেম্বারশিপ প্রিভিলেজকে আরও এডভান্স লেভেলে নিয়ে গেছে। যদিও অ্যামেক্স কার্ড গুলোর অ্যানুয়াল ফি  মার্কেটে এভেলেবেল   সেম অন্যান্য কার্ড গুলোর তুলনায় কিছুটা  বেশি। তবে এর বিপরীতে কোম্পানিটি  ইউজারদের যে ধরনের এক্সক্লুসিভ মেম্বারশিপ প্রিভিলেজ প্রোভাইড করে তা কার্ডের অ্যানুয়াল ফির তুলনায়  তুলনায় যথেষ্ট ভ্যালুয়েবল‌। যা অ্যামেক্স কাস্টমারদের লোয়ালটি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলশ্রুতিতে কোম্পানিটি হয়েছে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম সাকসেসফুল একটি কোম্পানি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন