ইউটিউব চ্যানেল থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করে

এক দশক আগেও ইউটিউবিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে কেউ কন্সিডার করতে না। তবে সময়ের সাথে সাথে বর্তমানে ইউটিউবিং শুধু ক্যারিয়ারই নয় বরং ইউটিউব চ্যানেল গুলো ফুল টাইম বিজনেসে পরিণত হয়েছে। ইউটিউব ব্লগের একটি আর্টিকেল সূত্রে অক্সফর্ড ইকনমিক্সের এক্সপার্টদের মতে ২০২০ সালে শুধুমাত্র ইউএসএতে ৩লক্ষ ৯৪ হাজার ফুল টাইম ইকুয়েবিলেন জব জেনারেট করেছে ইউটিউব ক্রিয়েটিভ ইকোসিস্টেম । 


অন্যদিকে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামের অধীনে ২ মিলিয়নের বেশী ক্রিয়েটর রয়েছে এবং ২০২১ সালে পাবলিশ হওয়া আর্টিকেলটি অনুসারে ইউটিউব গত তিন বছরের বেশি সময় বিভিন্ন ক্রিয়েটর , আর্টিস্ট , মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পে করেছে। বিবিসির একটি তথ্যসূত্রে ২০২১ সালে বিশ্বে সেরা ১০ জন ইউটিউবার সম্মিলিত ভাবে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে। এর মধ্যে জনপ্রিয় ইউটিউবার মিস্টার বিস্টের আর্নিং ছিল ৫৪ মিলিয়ন ডলার এবং গত দুই বছর ধরে টপ আর্নার লিস্টের শীর্ষে থাকা ১০ বছর বয়সী রায়ান কাজী ২৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল।কিন্তু এই ইউটিউব চ্যানেল গুলো আদ্যেতে কিভাবে রেভিনিউ জেনারেট করে? ২০০৫ সালে অফিশিয়ালি ইউটিউব প্লাটফর্মটি লঞ্চ করা হয়। 

ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম,ইউটিউব থেকে ইনকাম,ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জন,ইউটিউব থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়,আমি ইউটিউব থেকে কত টাকা আয় করি,ইউটিউব থেকে টাকা,ইউটিউব থেকে ইনকাম হালাল,ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জন ২০২০,ইউটিউব থেকে টাকা উপার্জন a to z,টাকা ইনকাম,মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম,ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার উপায়,ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার উপায়,ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করব কিভাবে,কিভাবে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করে,ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার পদ্ধতি
ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম

লঞ্চের এক বছর পর ২০০৬ সালে টেক জায়ান্ট গুগল ইউটিউবকে ১.৬৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময় করে নেয় অ্যাকোয়ার করে নেয়। সেসময় স্মার্টফোন এবং হাই স্পিড ইন্টারনেট ধীরে ধীরে অ্যাক্সিসবল হতে শুরু করলে স্মার্টফোনের মাধ্যমে কমিউনিকেশন এবং কনটেন্ট কনজামশন বৃদ্ধি পেতে থাকে।ফলশ্রুতিতে ইউটিউবের মত প্লাটফর্মে গুলিতে ভিডিও কনজামশন বাড়তে থাকে।যার পেক্ষিতে প্ল্যাটফর্মটিতে অ্যাডভার্টাইজের পরিমাণও বাড়তে থাকে এবং ইউটিউবারদের রেভিনিউ বাড়তে থাকে। ফলে ইউটিউবাররা কন্টেন ক্রিয়েশনে আরো ফোকাস করতে শুরু করে এবং অনেকে রেগুলার জব ছেড়ে দিয়ে ইউটিউবিংকে ফুল টাইম জব হিসাবে নিতে শুরু করে। এছাড়া অনেক নতুন ক্রিয়েটরও প্ল্যাটফর্মটির জন্য কন্টেন ক্রিয়েশনে শুরু করে। 


গ্লোবাল মিডিয়া ইনসাইডের ২০২১ সালের একটি তথ্যসূত্রে শুরু করে প্রতি মিনিটে প্রায় ৫০০ ঘন্টার নতুন কন্টেন ইউটিউবে আপলোড হয় এবং এভারেজে একজন ভিজিটর প্রতিদিন প্রায় ১৬মিনিট ৪৪ সেকেন্ড সময় ইউটিউবে স্পেন্ড করে থাকে। গ্লোবাল মিডিয়া ইনসাইডের আরেকটি তথ্যসূত্রে ইউটিউবে প্রতিদিন অ্যাক্টিভ ইউজারের সংখ্যা ১২২ মিলিয়ন। অন্যদিকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ইউটিউবে চ্যানেলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১ মিলিয়ন। এদিকে ফোর্বসের তথ্যসূত্রে ২০২১ সালে ৫৪ মিলিয়ন ডলার গ্রোস্ট টোটাল নিয়ে টপ আর্নিং ইউটিউবার ছিলেন Mr Beast,Billie Eilish, Angelina Jolie,Kim Kardashian এবং জনপ্রিয় কেপপ ব্যান্ড বিটিএসের আর্নিং থেকেও বেশি।


এছাড়া টপ আর্নিং ইউটিউবারে তালিকায় থাকা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে থাকা Jack Paul এবং Markiplier আয় যথাক্রমে ৪৫ মিলিয়ন ডলার এবং ৩৮ মিলিয়ন ডলার।The India Times এর একটি তথ্যসূত্রে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ২ মিলিয়নের বেশি মানুষ ইউটিউব থেকে আর্ন করছে। তবে শুধুমাত্র ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করার মাধ্যমে ইউটিউব চ্যানেল গুলো আদ্যেতে কীভাবে এত পরিমাণে আর্ন করছে? ইউটিউব চ্যানেলের রেভিনিউ জেনারেটিং সোর্স মধ্যে গুগল এডসেন্স অন্যতম প্রধান সোর্স। এডসেন্স মূলত ননস্কিপবেল অ্যাডস , স্কিপবেল অ্যাডস, বাম্পার অ্যাডস সহ মোট সাতটি ফরমেটের অ্যাড দেখানো হয়। Influencer Marketing Hub এর একটি তথ্যসূত্রে অ্যাডের বিপরীতে জেনারেট কৃত টোল এডসেন্স রেভিনিউর গড়ে ৬৮% ইউটিউব চ্যানেলে গুলোর সাথে শেয়ার করা হয়। eBiz Facts এর একটি তথ্যসূত্রে জনপ্রিয় টেক ইউটিউব চ্যানেল এমকিবিসডির ক্রিয়েটর Marques Brownlee প্রতি মাসে ইউটিউব অ্যাড রেভিনিউ থেকে ৮৫০০০ ডলার রেভিনিউ জেনারেট করে। 


অন্যদিকে বাংলাদেশী ইউটিউবার খালেদ ফরহাদ ২০২১ সালের মে মাসে অ্যাডসেন্স থেকে প্রায় ২ হাজার ডলার আয় করেন।ইউটিউব চ্যানেলে প্লাটফর্মটির প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন ইউজারদের কাছে থেকেও রেভিনিউ জেনারেট করে থাকে। ইউটিউব প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন মূলত ইউজারদেরকে ফ্রি ইউটিউব ইনজয় করার সুযোগ দিয়ে থাকে। অন্যদিকে ইউটিউব এধনের প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন ইউজারদের কাছে থেকে যে জেনারেট করে তার একটা অংশ চ্যানেল গুলোর সাথে শেয়ার করে। এক্ষেত্রে একজন প্রিমিয়াম সাবস্ক্রাইবারের ভিডিও ওয়াচ টাইমের উপর নির্ভর করে ইউটিউ সে চ্যানেলের সাথে রেভিনিউ শেয়ার করে থাকে। ইউটিউব চ্যানেল গুলো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাথে কলাবেরশন এবং স্পন্সরশীপের মাধ্যমে আয় করে থাকে। এই রেভিনিউ সোর্সটি মূলত ইউটিউব প্লাটফর্মের বাইরে ক্রিয়েটরদের জন্য একটি রেভিনিউ জেনারেটিং সোর্স। মূলত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রডাক্ট ও সার্ভিস প্রমোট করা বিনিময়ে ক্রিয়টররা এধরনের ব্যান্ড কলাবরেশন স্পন্সরশীপের মাধ্যমে আয় করে থাকে। এছাড়া চ্যানেলগুলো এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে রেভিনিউ জেনারেট করে। এক্ষেত্রে চ্যানেলের গুলো তাদের স্পন্সার করা ব্যান্ড গুলো প্রডাক্ট বা সার্ভিসের এফিলিয়েট লিঙ্ক ভিডিও ডেসক্রিপশনে শেয়ার থাকে।এফিলিয়েট লিঙ্ক থেকে করা প্যাচেজের বিনিময়ে ইউটিউব চ্যানেল গুলো ব্যান্ড গুলোর কাছ থেকে কমিশন পেয়ে থাকে। 


Omnicore এজেন্সির তথ্যসূত্রে ২০২০ সালে ৭০% অ্যাডিয়ানসই ইউটিউবে দেখা প্রডাক্ট প্যাচেজ করেছে। ফলশ্রুতিতে Statista তথ্য সূত্রে ইউটিউব ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং লিঙ্কডিনের পর মার্কেটে ফোর্থ মোস্ট পেফারড সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে। ইউটিউব চ্যানেল গুলো তাদের মেম্বারশিপ সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে রেভিনিউ জেনারেট করে। পছন্দের ইউটিউবারদের সার্পোট করতে সাবস্ক্রাইবার সাবস্ক্রিপশন ফির বিনিময়ে চ্যানেলের মেম্বার হতে পারে। সাবস্ক্রিপশনের বিনিময়ে মেম্বারা এক্সক্লাসিভ পোস্ট, লোয়াটি ব্যাচ এবং এক্সক্লুসিভ ইমোজির মতো বিভিন্ন ফিচার উপভোগ করতে পারে। প্রতিটি চ্যানেলের মেম্বারশিপ ফি ৪.৯৯ ডলার থেকে শুরু হয় যার ৭০% ইউটিউব চ্যানেল গুলোর সাথে শেয়ার করে। 


অন্যদিকে ইউটিউব প্যাটনার প্রোগ্রামের মেম্বার চ্যানেলগুলো সুপার চ্যাট এবং ক্রাউডফান্ডিং ফিচার ব্যবহার করে ফ্যানদের কাছ থেকে আয় করে থাকে। ফ্যানরা তাদের ফেভারেট ইউটিউবারদের অ্যাটেনশন গেইন করতে বিভিন্ন অ্যামাউন্টের ডোনেশনের মাধ্যমে সুপার চ্যাট, সুপার স্টিকার এবং সুপার থ্যাঙ্কসের মতো কমেন্ট এবং স্টিকার ব্যবহার করে থাকে।একজন ইউজার একদিন সর্বোচ্চ ৫০০ ডলার এবং সপ্তাহে সর্ব দেড় হাজার ডলার পর্যন্ত সুপার চ্যাটের মাধ্যমে স্পেন্ড করতে পারে। ইউটিউব এসব ডোনেশন থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৭০% চ্যানেলগুলোর সাথে শেয়ার করে। প্লে বোর্ডের তথ্যসূত্রে ভ্যাচুয়্যাল কন্টেন ক্রিয়েটর Uruha Rushia তিন মিলিয়ন ডলারে বেশি সুপার চ্যাট রেভিনিউ নিয়ে এ যাবৎ কালের হাইয়েস্ট সুপার চ্যাট আর্নার । এছাড়া ইউটিউব চ্যানেল গুলো পেট্যাের্ন কিকস্টার এবং গোফানডমির মতো আরো কিছু জনপ্রিয় করার ক্লাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম থেকে রেভিনিউ জেনারেট করতে পারে। 



ইউটিউব চ্যানেল গুলো তাদের ম্যাচেনডাস সেলিং এর মাধ্যমে রেভিনিউ জেনারেট করে। চ্যানেল গুলো তাদের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং অ্যাফিলিয়েট প্যাটনারদের ওয়েব সাইটসহ বিভিন্ন ধরনের ই-কমার্স সাইটে অ্যাপারিয়েল , অ্যাকসেসরিস, ব্যাগ ও ডিঙ্ক ওয়্যারের মতো ম্যাচেনডাস সেল করে থাকে। ইউটিউব চ্যানেল তাদের কনটেন্টে লাইসেন্সিংর মাধ্যমে রেভিনিউ জেনারেট করতে পারে। কোন একটি চ্যানেলে কনটেন্ট অন্য কোন চ্যানেল বা ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর, ট্যাডিশোনাল টিভি মিডিয়া ওটিটি প্ল্যাটফর্ম যদি পাবলিশ করতে চায় সেক্ষেত্রে অরিজিনাল ক্রিয়েটরের কাছ থেকে লাইসেন্সিং এর মাধ্যমে কনন্টেনের পাবলিশিং রাইটসের লাইসেন্স কিনে নিতে হয়। এক্ষেত্রে সরাসরি কনন্টেন ক্রিয়েটর নিজেই কনন্টেন লাইসেন্সেসিং রাইটস বিক্রি করতে পারে অথবা চ্যানেলের সকল কনটেন্টের ডিজিটাল রাইটস ম্যানেজমেন্টের জন্য কোন multi-channel নেটওয়ার্কে বা MCN এর সাথে এগ্রিমেন্ট করতে পারে। 


২০২১ সালে ইউটিউব টিকিটের মতো একটা সর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম হিসেবে shorts নামে একটি নতুন ফিচার আনভেইল করে। ক্রিয়েটদের ইউটিউব সর্টস ফিচারটি ব্যাবহারে উৎসাহীত করতে ১০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ডও announce করে ইউটিউব। পূর্বেও ক্রিয়েটদের উৎসাহিত করতে ইউটিউব এ ধরনের ফান্ড অ্যানোকেট করেছিল। ইউটিউবের এধরনের ফান্ড গুলো ইউটিউবারদের জন্য একটি রেভিনিউ জেনারেটিং সোর্স।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন