ভাবসম্প্রসারণ অভাব অল্প হলে দুঃখও অল্প হয়ে থাকে

অভাব অল্প হলে দুঃখও অল্প হয়ে থাকে 

ভাব-সম্প্রসারণ : পৃথিবীতে সম্পদ সীমিত কিন্তু অভাব অসীম। ধনী-দরিদ্র সবারই কম-বেশি অভাব থাকে। সে অভাব পূরণের জন্যে মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে। তবে ধনীদের অভাব অসীম। সে প্রাপ্ত সম্পন নিয়ে কখনোই তুষ্ট নয়। সে সর্বদাই ধন বাড়ানোর জন্যে চিন্তাক্লিষ্ট থাকে। অভাবজনিত দুঃখবোধ তাকে কুরে কুরে খায়। কিন্তু প্রস্ত - সম্পদ নিয়ে মানুষ যদি সুখী থাকে তবে তার কোনো দুঃখ থাকে না।


চাহিদা বা অভাববোধ থেকেই মানুষের মনে দুঃখবোধ জন্মে। চাহিদার তারতম্যের ওপর নির্ভর করে দুঃখবোধের স্বল্পতা বা আধিক্য। ধনী-দরিদ্র সকলেরই অভাব আছে। তবে তাদের মধ্যে অভাবের ধরন এক নয়। বস্তুত প্রাপ্ত সম্পদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে কোনো দুঃখ থাকে না। ধনীদের অনেকেই গগনচুদী অট্টালিকায় বাস করে বিলাস সামগ্রীর মধ্যে ডুবে থাকলেও আরও বেশি পাবার আশায় সর্বদা চিন্তাক্লিষ্ট থাকে। সম্পদ বৃদ্ধির নেশায় উন্মাদের মতো ছুটতে থাকে, এমনকি বৈধ-অবৈধ যে পন্থাই হোক, তা অবলম্বন করতে দ্বিধা করে না। দরিদ্র জনগণের মুখের অন্ন পর্যন্ত কেড়ে নেয়। অপরদিকে বিত্তহীনরা বিত্তবানদের ধনৈশ্বর্য দেখে সম্পদ আহরণের ব্যর্থ চেষ্টা করে এবং সর্বদা হা-হুতাশ করে। বস্তুত যে কোনো জিনিসের আধিক্য মানবজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। বিশেষ করে পার্থিব সম্পদ মানুষকে ক্রমেই অতৃপ্ত করে তোলে এবং মনুষ্যত্ব বিলীন করে দেয়। ফন্নাহার যেমন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তদ্রূপ অল্প চাহিদাসম্পন্ন মানুষ সহজেই নিজেকে সুখী ভাবতে পারে। মানুষ যদি তার যা আছে সেগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে তাহলে তার আর দুঃখ থাকে না। জনৈক মনীষী বলেছেন, 'যত কম উপকরণ নিয়ে দিনাতিপাত করা যায় জীবনযাত্রা তত সুখের হয়। সুখী মানুষের গল্পে আমরা জানতে পারি তার কিছু না থাকায় সে সুখী জীবনযাপন করে। সুতরাং অভাববোধ যার যত কম তার দুঃখও তত কম হবে।


বস্তুত অভাবকে অভাব হিসেবে বিবেচনা না করলে দুঃখের আগমন ঘটে না। তাই জীবন থেকে অভাববোধকে দূরে রাখতে হবে। অভাবকে জয় করার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত।


আরও পড়ুন - 










একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন