পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতা

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা

আজকে আমরা যে পাতাটি নিয়ে আলোচনা করব।এই পাতাটি আয়ুর্বেদের একটি বিশেষ জায়গা জুড়ে আছে। এই পাতাটি যদি আপনি কোথাও দেখে থাকেন তবে বুঝে নেবেন বিভিন্ন রোগের জন্য আপনাকে আর কখনো ডক্টরের কাছে যেতে হবে না। হীরার চেয়ে দামি এই পাতাটি কোটি টাকার চেয়েও বেশি উপকারী। আজকে যে পাতাটির কথা বলব তা বাড়ির আনাচে-কানাচে কিংবা নিজের ছাদের টবে অনেকে রেখে থাকেন। এটিকে আমরা পাথরকুচি পাতা নামে চিনে থাকি। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহুকাল আগে থেকেই পাথরকুচি পাতার ঔষধি পাতা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে। যেমন: সর্দি, কাশি, জ্বর নিরাময়ে, ব্যথা কিংবা পেট ফাঁপা দূরীকরণে, পাইলসের সমস্যা দূরীকরণে, ত্বকের যত্নে ,যদি কারো কিডনি পাথর কিংবা পিত্তের সমস্যা থেকে থাকে তা দূরীকরণে, কাটাছেঁড়ায় ,জন্ডিস নিরাময়, শরীরের  দাত-খাজ-খুঁজলি, এলার্জি একজিমা দূরীকরণে। বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে পাতার গুণাবলী ও ব্যবহার রয়েছে। কোন রোগের ক্ষেত্রে পাতাটিকে আপনি কিভাবে ব্যবহার করলে নানাবিধ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারবেন জানতে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন। 

পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতা

পাথরকুচি পাতা একটি ঔষধি পাতা। যা সহজেই আপনার বাড়ির আঙিনাতে চাষ করতে পারেন। পাথরকুচি গাছের একটি পাতা নিয়ে মাটিতে রোপণ করে দিলে এর থেকে অটোমেটিক কিছু গাছ উৎপন্ন হতে থাকে। সেই  গাছগুলোকে আবার আলাদা আলাদাভাবে রোপন করে দিলে সেখান থেকে নতুন করে গাছ বেরিয়ে আসে। তাই এই গাছের উৎপাদন নিয়ে চিন্তা করার নতুন করে কোন কিছুই নেই ।কেউ চাইলে এই ঔষধি গাছ বাড়িতে চাষ করতে পারেন । 

পেট ব্যথা নিরাময়ে পাথরকুচি পাতা:

পাথরকুচি পাতার শিশুদের পেট ব্যথা নিরাময়ে কাজ করে থাকে । অনেক সময় শিশুদের পেটে মোচড় দেয়। পেটে ব্যথা করে ।সেসময় ৩০  থেকে ৬০ ফোটা পরিমাণ পাথরকুচি পাতার রস পেটে মালিশ করলে ব্যথার উপশম হয়ে যায়। অবশ্যই পেটব্যথা কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। আগে শিশুর পেটে চাপ দিয়ে দেখবেন যে পেটে চাপ দিলেই শিশু কান্না করছে কিনা। এতে করে বোঝা যাবে যে শিশুর পেটে ব্যথার কারণে শিশু কান্না করছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ৩০  থেকে ৬০ ফোটা রস নিয়ে   শিশু  পেটে ভালো ভাবে মালিশ করলে উপকার পাবেন।

সর্দি-কাশি দূর করতে পাথরকুচি পাতা:

 সর্দি ,কফ সারাতে পাতা দিয়ে বিশেষ উপকারী। অনেকের ঠান্ডাজনিত সমস্যা লেগেই থাকে,বুকে কফ জমে যায়, মুখে ঘর ঘর আওয়াজ হয়, সহজেই সর্দি কাশি ভালো হতে চায় না । এর জন্য আপনারা কিছু পরিমাণে পাথরকুচি পাতার রস ও মধুর সাথে মিশিয়ে  খেলে দারুন  উপকার পাবেন।  পাথরকুচি পাতার রস বের করে নিন ২ চা চামচ পরিমাণ। এর মধ্যে এক চা চামচ পরিমাণ খাঁটি মধু মিশ্রিত করে নিন ।এই মিশ্রণটিকে দুই ভাগে ভাগ করে নিন সকালে একবার বিকেলে  একবার। এভাবে দুবার খেতে পারলে দুই থেকে তিনদিনের মধ্যেই পুরোনো কফ শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। কাশির সমস্যা থাকলে, গলা ব্যথার সমস্যা থাকলে তা ভালো হয়ে যাবে ।এছাড়াও যদি আপনার সর্দি থেকে থাকে তা দূর হয়ে যাবে। তবে অবশ্যই রোগ না ভালো হয়ে যাওয়া পর্যন্ত নিয়মিত দুবেলা করে এ পাতার রস সেবন করে যাবেন। 

পেট ফাঁপা নিরাময়ে পাথরকুচি পাতা:

পেট ফাঁপা রোগের ক্ষেত্রে পাতাকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় য  পেটে  ফেঁপে গিয়েছে, পেট ব্যথা করছে, প্রস্রাব আটকে আছেন অথবা পেটে বায়ু হয়েছে সরছে না।  সেক্ষেত্রে দু'চার চামচ পরিমাণ পাথরকুচি পাতার রসের সাথে একটু পরিমাণে চিনি মিশ্রিত করে নেবেন । তারপরে সম্পূর্ণ মিশ্রণটি আধা গ্লাস কুসুম গরম জলে মিশিয়ে সেবন করবেন। এতে করে পেটের বায়ু নাস হবে এবং পেট পরিষ্কার হবে এবং যদি আপনার প্রস্রাব আটকে থাকে সে সমস্যা দূর হয়ে যাবে । 

ফোড়া নিরাময়ে পাথরকুচি পাতা :

কারো কারো শরীরে ফোড়া দেখা যায়।  ফোড়া পাঁকতে চায় না শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে এমন ফোড়া হতে পারে। কারো কারো নিতম্বে, উরুতে , কুঁচকি,কানতে, অঙ্গুলের ফাঁকে ,বুকে,পিঠে ইত্যাদি জায়গায় এমন ফোড়া হতে দেখা যায়। এই  ফোড়া গুলো দীর্ঘদিন ধরে লাল হয়ে থাকে হাঁটতে চায় না।  যখন পেঁকি ফেটে যায় তখন এররস আরেক জায়গায় লাগলে সেখান থেকে আবার নতুন করে ফোড়ার সৃষ্টি হয়। পাথরকুচিরপাতা সকাল-বিকেল ব্যবহার করলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে যেকোনো ফোড়া নিরাময় হয়ে যাবে। ফোড়া সেঁকে ফেটে যাবে এবং ভেতর থেকে সমস্ত বেরিয়ে যাবে এবং নতুন করে আর কোনো ফোরা হবে না। এক্ষেত্রে সকাল বেলা খালি পেটে দুটো পরিচ্ছন্ন পাথরকুচির পাতা চিবিয়ে খান। পাশাপাশি ভালোভাবে ধুয়ে  ছেঁচে নিয়ে এর রস বের করে নিন।  রসটা একটু পরিমাণে গরম করে নিন। তারপরে আপনার আক্রান্ত স্থানে সকাল-বিকেলে এর প্রলেপ লাগাতে থাকুন। দেখবেন দুই থেকে তিনদিনের মধ্যেই কেমন ফল পেতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি কিন্তু সকাল বেলা খালি পেটে পাতা কাচা চিবিয়ে খেতে ভুলবেন না । 

রক্ত পিত্ত দূর করতে পাথরকুচি পাতা:

রক্ত পিত্ত দূর করতে এ পাতার রস বেশ  উপকারী। যদি আপনার পিত্ত জনিত  ব্যথায় রক্তক্ষরণের সমস্যা থেকে থাকে । তবে দুবেলা ১ চা-চামচ করে পাথর কুচির পাতার রস দুদিন খেলে রক্তপিত্তের   সমস্যা ভালো হয়ে যাবে। 

মৃগী রোগীদের উপকারে পাথরকুচি পাতা:

মৃগী রোগীদের ক্ষেত্রে পাথর কুচির পাতার রস নাকে দিলে উপকার পাওয়া যায়। অনেক সময় মৃগী রোগীদের যেখানে সেখানে পড়ে কাতরাতে  দেখা যায়। যদি আপনার  আশেপাশে পাথরকুচি পাতা পেয়ে যান তবে পাথরকুচি পাতা থেঁতো করে ২ থেকে ১০   ফোটা রস মুখে দিয়ে দিন অথবা  নাকে দিয়ে দিন।  একটু পরেই দেখতে পাবেন রোগের উপশম ঘটছে এবং রোগীর জ্ঞান ফিরে আসছে। 


ত্বকের যত্নে পাথরকুচি পাতা:

ত্বকের যত্নে পাথরকুচি-পাতা  বেশ উপকারি।এ  পাতায় প্রচুর পরিমাণে জল থাকে। যা ত্বকে খুব বেশি উপকার করে থাকে।  এছাড়া অনেকের ত্বকে, মাথায়, শরীরে, ঘাড়ে হাত পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া করে, এ পাতা বেটে যদি আপনার ত্বকে প্রলেপ লাগাতে পারেন তবে যেকোন জায়গার জালাপোড়া দুর হয়ে যাবে। নিয়মিত পাথরকুচি পাতা বেটে মুখের উপরে লাগাতে পারে ব্রণ ও ফুসফুসের সমস্যা দূর হয়ে যায়,  ত্বকের জীবাণু দূর হয়ে যায় এবং ব্রণের দাগ দূর হয়ে যায়।

কাটা-ছেড়াঁ  নিরাময়ে পাথরকুচি পাতা:

কাটা-ছেড়াঁতে  এ পাতাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি কোথাও টাটকা কাঁটা হয়ে থাকে অর্থাৎ হঠাৎ করে আপনার কোথাও কেটে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হতে থাকে তবে কিছু পাতা ভালো হবে এটিকে তাপে গরম করে নিন। তারপরে থেঁতলে  আপনি আপনার কাটা জায়গায় সেক  দিন। রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। কাটাছেঁড়া নিরাময় হয়ে যাবে ।  দ্রুত রক্ত বন্ধ করার জন্য  ছেঁচে এর রসও সরাসরি আপনি কাটার জায়গায় লাগাতে পারেন এবং পরবর্তীতে
এই কাটার জায়গার  ব্যথা ও যন্ত্রণা দূর করার জন্য পাথরকুচি পাতা হালকা গরম করে আপনার কাটা জায়গায় সেক দিলে উপকার পাবেন। 

পাইলস নিরাময়ে পাথরকুচি পাতা:

পাইলস রোগ  অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক একটি রোগ রয়েছে। এ  রোগটি যার হয়েছে এর যন্ত্রনায় সেই বোঝে। পাইলস রোগের কারণে মলত্যাগের সময় ব্যথা হয়, রক্তপাত হয় ,মলদ্বারের রাস্তা একটি মাংসের মতো বেরিয়ে আসে। এজন্য পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।কিছু পরিমাণ পাথরকুচির পাতা নিয়ে নিন। আপনি বড় সাইজের হলে তিন থেকে চারটি নিতে পারেন। ছোট সাইজের হলে চার থেকে পাঁচটি নিতে পারেন।  এ  পাতা ভালোভাবে ছেঁচে  এর মধ্যে থেকে রস গুলা বের করে নিন। তার সাথে কিছু পরিমাণে গোলমরিচ মিশিয়ে নিন। তিন থেকে চারটি গোল মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে নিলেই যথেষ্ট। এটি আপনি নিয়মিত খাবেন সকাল বেলা খালি পেটে। আপনি খেয়াল করবেন ৭ দিনের মধ্যে আপনার পাইলসের ব্যথা ও যন্ত্রণা ভালো হতে শুরু করেছে। তবে রোগ নিরাময় হয়ে যাওয়া পর্যন্ত নিয়মিত এ পাতার রস খেয়ে যাওয়া জরুরী ।

চর্ম রোগ নিরাময়ে পাথরকুচি পাতা:

যাদের ত্বকে এলার্জি, একজিমা, দাদ, খাজ ,খোদ,পাছড়া যেকোন ধরনের চর্ম রোগ রয়েছে এবং তা ভালো হচ্ছে না। তারা নিয়মিত সকাল বেলা খালি পেটে দুটো পাথরকুচি পাতা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এ পাশাপাশি পাতা অথবা কাঁচা  হলুদ অথবা কালো জিরের  সাথে পেটে  ত্বকের উপর প্রলেপ লাগিয়ে আধা ঘন্টার মত রেখে কুসুম গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে তিন থেকে সাত দিন করতে পারলেই আপনার দেহের ওপরে যত পুরনো খোস পাঁচড়া,  দাদ, খাজ বা চর্ম রোগের সমস্যা থেকে থাকে থাকুক তা ভালো হয়ে যাবে। 

নটি পাথরকুচি পাতার রস অবশ্যই খাবেন। অর্থাৎ দাঁতে ভালোভাবে চিবিয়ে গিলে খাবেন। এতে করে উপকার মিলবে এবং প্রস্রাবের সমস্যা, প্রস্রাবে ইনফেকশন,প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া ও যন্ত্রণা হওয়া কিংবা প্রসাবের সময় ব্যথা হওয়া ,প্রসবের সময় রক্তপাত অথবা প্রসাবের সাথে পুঁজ বের হওয়া ইত্যাদি সমস্যার সমাধানেও পাথরকুচি পাতা জাদুর মত কাজ করে থাকে। সকাল বেলা দুটো পাতা ছেঁচে আধাগ্লাস পরিমাণ কুসুম গরম জলের সাথে পাতার রস মিশিয়ে খালি পেটে এক বার সেবন করুন।  আবার সন্ধ্যে বেলা ঠিক একই নিয়মে সেবন করুন। এভাবে ৭ থেকে ১৪  দিন সেবন করলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা যেমন দেখবেন তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে তেমনই  মূত্র জনিত সমস্যা যাদের রয়েছে তা ভালো হতে শুরু করবেন।

কিডনির পাথর,পিত্তথলিতর সমস্যা, গলগন্ড নিরাময়ে পাথরকুচি পাতা:

সবশেষে বলছি যাদের কিডনিতে ইতমধ্যেই পাথর হয়ে গিয়েছে এবং যাদের পিত্তথলিতে কোন সমস্যা রয়েছে। তারা এই পাথরকুচি পাতা ব্যবহারের মাধ্যমে কিডনি পাথরকে গুলিয়ে ফেলতে পারেন। অথবা গলা যদি কারো গলগণ্ডের পাথর থেকে থাকে। সে পাথরকে কেউ দূর করতে পারেন। তাদের ক্ষেত্রে দিনে দুবার এ পাতার রসটি সেবন করতে হবে। যাদের  ইতমধ্যেই গলগন্ডে সমস্যা আছে, কিডনিতে পাথর আছে, কিডনি রোগ রয়েছে, পিত্তথলির রোগ রয়েছে  তারা সকালবেলা  তিনটি পরিচ্ছন্ন পাথরকুচি পাতা চিবিয়ে খাবেন এবং একইভাবে আবার বিকেল বেলা খাবেন এবং অন্ততপক্ষে ৭ থেকে ১৪ দিন খেয়ে যাবেন। যখন আপনার রোগ কিছুটা নিরাময় হতে শুরু করবে তখন মাঝপথে ছেড়ে দেবেন না। রোগ না ভালো হয়ে যাও পর্যন্ত এ পাতা সেবন করলে কিডনির পাথর অপসারণ হয়ে যাবে। পিত্তথলিতে সমস্যা থাকলে তা দূর হয়ে যাবে। গলগন্ড থাকলে তা কমতে শুরু করবে। 

অবশ্যই পাতা ব্যবহারের সময় মাথায় রাখবেন অপরিচ্ছন্ন জায়গা থেকে পাতা সংগ্রহ করবেন না। পাতা সংগ্রহ করার পর তা হালকা কুসুম গরম জলে ধুয়ে নেয়া ভাল না।কারণ পাতা  গায়ে অনেক সময় অনেক ময়লা বা কীটপতঙ্গ থাকতে পারে। তা আপনার পেট খারাপের সমস্যা করে ফেলতে পারেন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন