১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে বক্তব্য

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বক্তব্য


১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বক্তব্য, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে বক্তব্য, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বক্তব্য,শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস,বুদ্ধিজীবী দিবস,শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস রচনা,শহীদ বুদ্ধিজীবী,শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ,শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে,রচনা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস,শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখ,শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কত তারিখে,শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস স্মরণসভা,১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস,আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস,শহীদ বুদ্দিজীবি দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবস বক্তব্য
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বক্তব্য

১৪ ডিসেম্বর  শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সম্মানিত আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সুধীমণ্ডলি আসসালামু আলাইকুম ।


আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এদিন জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের শিকার তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদের বাংলাদেশী সহযোগীদের মাধ্যমে আল-বদর বাহিনী গঠন করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। তবে এ তারিখেই বিজয় মাসে শুরু থেকেই এই নির্মম হত্যাকাণ্ড শুরু হয়। 


বুদ্ধিজীবী কথাটির আক্ষরিক অর্থ দিয়ে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয় যিনি বা যারা বুদ্ধি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।  তবে  বাংলা একাডেমি প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে বুদ্ধিজীবীদের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা হলো: "বুদ্ধিজীবী অর্থ লেখক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী সকল পর্যায়ের শিক্ষক, यষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাক্ষর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, চলচ্চিত্র ও নােিকর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সমাজসেবী ও সংস্কৃতিসেবী।"


আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যখন বাঙালি বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত তখন পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এক ঘৃণ্যতম পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি এদেশের শ্রেষ্ঠ মানুষদের নিঃশেষ করে বাঙালি জাতিকে মেধাশুন্য করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন । তারই পরিকল্পনা মাফিক পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কৌশলে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ এই সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হন। ১২ ডিসেম্বর সেনা সদর দফতরে আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তুলে দেয়া হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশের বিশ্বাসঘাতক ও  ষড়যন্ত্রকারীরা এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পরবর্তীতে ঢাকার মিরপুর, রায়ের বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণকবরে তাঁদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর নিকটাত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের মৃতদেহ শনাক্ত করেন। অনেকের দেহে আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারও কারও শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন দেখা যায়। অনেককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যার পূর্বে যে তাঁদেরকে নির্যাতন করা হয়েছিল, সে তথ্যও বের হয়ে আসে। 


গবেষকদের মতে, ২৫ মার্চের কালো রাতেই পাকিস্তানিরা অনানুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে বুদ্ধিজীবীদের নিধন এবং সেটি চলে যুদ্ধের পুরো নয় মাস জুড়ে।্য১৬ই ডিসেম্বরে আত্মসমর্পনের পূর্বে পাকবাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা মিলে ৩৬০ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে।  এমনকি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় লাভের পরেও বুদ্ধিজীবীদের নিধন অব্যাহত থাকে। যেমন: ডা মনসুর আলীকে হত্যা করা হয় ২১ ডিসেম্বরআর   চলচ্চিত্রকার, গল্পকার জহির রায়হান নিখোঁজ হন ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে।


হত্যাকারীরা বুদ্ধিজীবীদের পেন্টালো কায়দায় ধরে নিয়ে কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে কোন বিশেষ ক্যাম্পে বা বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। প্রাপ্ত তথ্যসমূহে দেখা যায়, শহরে জারিকৃত কারফিউয়ের সুযোগে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাদের ওপর চালানো হয়েছিল নির্মম নির্যাতন।যে নির্যাতন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। বেয়নেদের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করা হয়েছিল দেশের শ্রেষ্ঠ ও মেধাবী সন্তানদের।


ঘাতকরা যাদের হত্যা করেছিল তাদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক জি সি দেব, মুনীর চৌধুরী,জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামউদ্দীন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সাহিত্যিক সেলিনা পারভীনসহ অনেককে।


একাত্তরে ঠিক কতজন বুদ্ধিজীবীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। সব শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিচয় দূরের কথা তাদের প্রকৃত সংখ্যাই অদ্যবধি নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। এই ঘাটতি স্বীকারের পরও বাংলাপিডিয়া কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র উল্লেখ না করে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ১১১১ বলে তথ্য দেয়। তথ্যসূত্র থেকে শহীদদের মোটামুটি একটা সংখ্যা দাঁড় করানো যায়। তাদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী এবং অন্যান্য ২ জন।


বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকার মিরপুরে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। স্মৃতিসৌধটির স্থপতি হলেন মোস্তফা হালি কুদ্দুস। ১৯৯১ সালে ঢাকার রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ নামে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ শুরু হয়, যা ১৯৯৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এর নকশা করেন জামী-আল সাফী ও ফরিদউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে একটি স্মারক ডাকটিকিটের ধারাবাহিক প্রকাশ করেছে।


পাকিস্তান দুঃশাসনের দিনগুলোতে  আমাদের লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী,  বুদ্ধিজীবীরা বিবেকের কণ্ঠস্বর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।  নিজের  জ্ঞান  ও অধ্যবসায়ের     মাধ্যমে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন  আলোকিত করেছেন। এসব কারণেই তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্মমতার শিকার হয়েছেন। এত কম সময়ে এত বেশিসংখ্যক বুদ্ধিজীবী নিধনের উদাহরণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ  ছাড়া আর কখনো ঘটেনি।  ১৯৭১  সালে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ছিল  মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।  দীর্ঘ অপেক্ষার পর বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত কয়েকজন  শীর্ষ অপরাধীর বিচার  ও শাস্তি কার্যকর হয়েছে।  বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে  দেশ  বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এটি জাতির জন্য স্বস্তিকর।  বিজয় দিবসের প্রাক্কালে আজকের এই দিনে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে বলতে চাই , জাতির সূর্য সন্তানদের বছরের একটি দিন স্মরণ করাই যথেষ্ট নয়।  আমাদের অনুধাবন করতে হবে কেন এই মহৎপ্রাণ মানুষগুলো জীবন দিয়েছেন।  তাদের চিন্তা আদর্শ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে  হবে। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।  সর্বোপরি বলতে চাই , একাত্তরের ঘাতক ১০  থেকে ১৪  ডিসেম্বর যেসকল  বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে তারা ছিলেন মুক্ত চিন্তার প্রতীক।  দেশপ্রেমিক এসব বুদ্ধিজীবী স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় দেখতে চেয়েছিলেন। বাস্তবতা যে স্বাধীনতা লাভের কয়েকদিন আগেই তাদের হত্যা করা হয়। সংগত কারণে হত্যাকারীদের যেমন   ঘৃণা  প্রাপ্ত  তেমনি কেবল বুদ্ধিজীবী দিবসেই তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় আপ্লুত হয়ে উঠবো  এমনটি প্রত্যাশিত নয়।   আমি মনে করি নতুন প্রজন্মের  স্বার্থে  বুদ্ধিজীবীদের  স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগের পাশাপাশি জাতির  এ শ্রেষ্ঠ সন্তানরা যে চেতনা লালন করেছেন আমৃত্যু তার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।  বিজয়ের মাসে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বজ্র শপথ নিতে হবে যে কোনো মূল্যে রুখে দিতে হবে দেশবিরোধীদের অপতৎপরতা  উপড়ে ফেলতে হবে হিংস্র  বিষ দাঁত।   না হলে একাত্তরের মহান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে না কোনদিন।


১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবী- দের স্মরণে আজকের এই অনুষ্ঠানে আসুন আমরা শপথ নিই-  শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দিব না।


১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে বক্তব্য pdf ডাউনলোড করুন। 


বীরের জাতি হিসেবে এই প্রজন্মের উচিৎ বিশ্বের বুকে আমাদের আরও গৌরবের স্থান নিশ্চিত করা। বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নীতি আর আদর্শের চর্চা নিশ্চিত করতে পারলে আমরা একটি কল্যাণকর  রাষ্ট্র  হিসেবে প্রিয় বাংলাদেশকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবো।

আরও পড়ুন - শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে ১০ টি বাক্য


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন