বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য

বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য


আমাদের অনেকেই কোন না কোন সময় বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে হয়। হোক তা  চাকরিজীবনে দীর্ঘদিনের সহকর্মী অবসর জনিত বিদায় বা বদলি অথবা পদোন্নতি জনিত বিদায় কিংবা কোন ক্লাবের কমিটির বিদায় বিদায় বা ফ্ল্যাটের কারো বিদায় আর শিক্ষাজীবনের স্যারের, বড় ভাইদের  বা নিজের বিদায় তো আছেই। হঠাৎ করে বিদায় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক  যখন বলে উঠেন এবারে বক্তব্য রাখবেন নিজের নামটা যখন বললেন তখন মনটা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে । কি বলব ?  কিভাবে শুরু করব ? যাই হোক আজ আমরা বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য কিভাবে শুরু করব সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করব । 
বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য,বিদায় অনুষ্ঠানের ভাষণ,বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য,বিদায়ী বক্তব্য,বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য,বিদায় অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা স্ক্রিপ্ট,বিদায় অনুষ্ঠান,বিদায় অনুষ্ঠান,বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকের বক্তব্য,বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকের নমুনা বক্তব্য,বিদায় অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য,বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য,বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব‍্য,বিদায় অনুষ্ঠানের বক্ত‍ব‍্য,এসএসসি বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য,এস এস সি বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য

বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম 


শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বা যার যে ধর্মেই সে ধর্মের প্রথা অনুয়ায়ী শুরু করতে পারেন। তারপর বলতে হবে যারা আয়োজক তাদের বিষয়ে উল্লেখ করেন তাদেরকর্তৃক আয়োজিত বিদায় অনুষ্ঠানের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতির নাম বলবেন। বিদায়ীদের  উল্লেখ করবেন , বিশেষ অতিথিদের নাম বলবেন এবং উপস্থিত প্রিয় সুধী আসসালামু আলাইকুম তারপর বলতে পারেন  কিছু ছন্দ বা কবিতা লাইন   এরকম  "যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয় , তবু চলে যায় ।"  তারপর বলতে পারেন তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ বিদায়। কিন্তু শব্দটি আপাদমস্তক বিষাদে ভরা।  শব্দটা কানে আসতেই মনটা কেন যেন বিষন্ন হয়ে ওঠে । কারণ এই যে বিদায় হচ্ছে বিচ্ছেদ আর প্রত্যেকটা বিচ্ছেদের মাঝেই নিহিত থাকে আনন্দ বেদনার স্মৃতি। তারপর বিদায় অতীতের আপনার রিলেটেড হৃদয় স্পর্শ করা দুই-একটি স্মৃতির কথা বলতে পারেন।  কথা বলার সময় আবেগ থাকবে অথবা হৃদয় স্পর্শ করা গল্প দিয়ে কথা শুরু করতে পারেন। তারপর বলতে পারেন এটি একটি বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র কারণ মন থেকে চিরতরে বিদায় দেওয়া সম্ভব নয়। বিদায়ী ব্যক্তির গুণ গুলো উল্লেখ করতে পারেন "সেজন্য আমরা আপনার কাছে চির কৃতজ্ঞ" অথবা বলতে পারেন "বিদায় শব্দটা তাদের জন্যই যারা মন থেকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে না ।আমাদের কাছে আপনার এই বিদায়ে আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কেননা আমরা আপনাকে মন থেকে ভালোবেসেছি।" তারপর তার বিভিন্ন গুণ উল্লেখ করে আমরা কিভাবে সেই গুণকে ভর করে সামনে এগিয়ে যাব সে বিষয়ে বলতে পারেন ।  অথবা বলতে পারেন "চিরবিদায় ছাড়াও নানা রকম বিদায় আছে । যেমন-  খনিক দেখা  হওয়ার পর বিদায়, একা হওয়ার বিদায়,  প্রিয়জনের মন থেকে বিদায় , কর্মজীবন শেষে বিদায় এই প্রতিটি পেছনে কিছু স্মৃতি থাকে  কিছু কথা থাকে। "  
তারপর দুইটি স্মৃতি বলতে পারেন। তার গুন গুলি উল্লেখ করতে পারেন।  যেমন -" তার মতো ত্যাগী, কর্মট, পরিশ্রমই, সৎ, নীতিবান ও মেধাবী মানুষ আমার কর্মজীবনের আমি খুব কম দেখেছি । তার মত মানুষ যে কোন অফিসের জন্যই  গর্বের। তার বিদায়ের এই মুহূর্তে আমার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে । তার বিদায় এই অফিসের যে কি অপূরণীয় ক্ষতি হবে তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়! আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। উনি যেন উনার পরিবার নিয়ে সুখে থাকেন। আশা করি আমাদের মধ্যে সবসময় যোগাযোগ থাকবে।"  তারপর কবিতার কয়েকটি লাইন দিয়ে শেষ করতে  পারেন। যেমন যেমন-

সময় চলে যায় সময়ের আপন নিয়মে,
স্রোত বয়ে যায় তেমনি জনমে জনমে।
কাননে ফোটে নবপুস্প, পুরনোটি ঝরে।
মানুষ যায় আসে তবু, স্মৃতি নাহি মরে।

তার বিদায়ী ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলতে হবে তার বিদায় বেলায় তার স্মৃতি ভুলে যেতে চাইলে ভুলা যায়না ধন্যবাদ। 


নিচে কিছু বক্তব্যের নমুনা দেওয়া হলো - 

বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের বক্তব্য

২০... সালের SSC/HSC/Honours/ Masters ব্যাচের বিদায় উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত মাননীয় অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী, সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ পরম স্নেহের বিদায়ী ছাত্র-ছাত্রীরা; সবাইকে আমার সালাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।


"কত বুক-ভাঙা গোপন ব্যথায়

 আজ কতগুলি প্রাণ কাঁদিছেকোথায়-

পথিক! ওগো অভিমানী দূর পথিক!

কেহ ভালোবাসিল না ভেবে যেন আজো

মিছে ব্যথা পেয়ে যেয়ো না,

যাবে যাও, তুমি বুকে ব্যথা নিয়ে যেয়ো না।


আজ এই প্রিয় প্রতিষ্ঠান থেকে তোমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ের দিন। সময়ের প্রয়োজনে তোমাদের চলে যেতে হচ্ছে বৃহত্তর দিগন্তের পানে। কালের আমোঘ নিয়তিতে এভাবেই চলে আসা- যাওয়ার পর্ব। তবু, আমাদের হৃদয় আজ অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত। বিদায় জিনিসটা খুব কষ্টের। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হচ্ছে, আজ তোমাদের বিদায় অনুষ্ঠান। যদিও আমি মনে করি এটা একটা বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারণ মন থেকে চিরতরে বিদায় নেওয়া কখনও সম্ভব হবে না।তোমরা এই প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ ...... বছর পড়েছ এবং ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও তোমাদেরকে   প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় দিতে হচ্ছে। মনে রাখবে এই বিদায় বিদায় নয়, এক স্তর হতে অন্য স্তরে যাওয়া মাত্র। দোয়া করি তোমাদের এই বিদায় শুভ হোক। তোমরা  সুশিক্ষিত হয়ে পিতা- মাতার স্বপ্ন পূরণ করবে। তোমরাই দেশ জাতীর আগামী ভবিষ্যৎ। তোমাদের কর্মনিষ্ঠা, অধ্যবসায় পরিশ্রমের ফসল নিয়ে তোমরা আনন্দে উদ্বেলিত হবে, আজকের এই বিদায় অনুষ্ঠানে সে দিনের প্রত্যাশা করছি। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি তোমরা সুস্থ থাকো, দীর্ঘজীবী হও, তোমাদের জীবন আনন্দে ভরে উঠুক। আমাদের স্মৃতিপটে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকুক আজকের এই দিনের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহুর্ত।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা,

"অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,

ঝরা বকুলের কান্না ব্যথিবে আকাশ,

সেই ক্ষণে খুঁজে দেখো-কিছু মোর পিছে রহিল  সে

তোমার প্রাণের প্রান্তে; বিস্মৃতিপ্রদোষে

হয়তো দিবে সে জ্যোতি,

হয়তো ধরিবে কছু নাম-হারা স্বপ্নের মুরতি।"


পরিশেষে, প্রাণপ্রিয় সকল ছাত্র-ছাত্রীর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দীর্ঘায়ু কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে।


আরও পড়ে দেখুন - সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনার নমুনা স্ক্রিপ্ট

বিদায় অনুষ্ঠানে সহকর্মীদের বক্তব্য

উপস্থিত আজকের সভার সম্মানিত সভাপতি মাশয়, শ্রদ্ধেয় অতিথিবর্গ, মাননীয় প্রধান শিক্ষক আমার সকল সহকর্মী তথা সহযাত্রীদের জানাই অভিনন্দন আন্তরিক শুভেচ্ছা সালাম।

আজকে এখানে আমাদের উপস্থিতির কারণ আমরা সকলেই খুব ভালোভাবে জানি। আজকে সত্যিই একটি বেদনার দিন, একটি মন খারাপের দিন। আজ আমাদের প্রিয় শ্রদ্ধেয় …. ..  দীর্ঘ ৩৫ বছরের কর্মজীবনের পরিসমাপ্তির দিন। একটা বহতা নদীর জীবনে হঠাৎ ছন্দ পতনের দিন। একটি ভীষণ রকমের অনাকাঙ্ক্ষিত দিন।

বিদায় জিনিসটা বড় বেদনার, বিদায় বড় কষ্টের। তাই অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বলতে হয়, আজ ….. বিদায় অনুষ্ঠান। যদিও আমি মনে করি এটা একটা বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারণ মন থেকে চিরতরে বিদায় দেওয়া কিংবা নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। আমাদের মধ্য থেকে …….  বিদায় সত্যি আমাদের জন্য হৃদয়বিদারক। তিনি আর পূর্বের ন্যায় আমাদের মাঝে আসবেন না ভাবতেই কেমন যেন লাগে। কিন্তু এটা তো প্রত্যেক চাকুরিজীবির জীবনের স্বাভাবিক এবং অবিচ্ছেদ্য একটি ঘটনা৷


সময় চলে যায়

 বয়ে যায় নদী

আর কথা রয়ে যায়

হৃদপিন্ডের পাতায় পাতায়।

 ভুলে যেতে চাইলেও অনেক স্মৃতি

ভর করে মনের ক্যানভাসে,

আপন হৃদপিন্ডের আয়নায়।


সুগন্ধি যেমন চোখে দেখা না গেলেও তার সৌরভ হৃদয়কে প্রফুল্ল করে। সুরের পাখি যেমন দূরে গেলেও তার রেশ ফুরোয় না, ঠিক তেমনি আপনার এই বিদায় বেলার স্মৃতি ভুলে যেতে চাইলেও ভোলা যায় না। অজস্র ছাত্র পরশপাথরের মতো আপনার হাতের ছোঁয়ায় পেয়েছে আলোকিত জীবন। ছাত্রদের সঙ্গে আপনার প্রীতিময় বন্ধন ছিন্ন হতে চলেছে। আপনি অবসরগ্রহণ করছেন। আজ আপনার বিদায়ের কথা ভেবে আমরা বেদনা-ভারাক্রান্ত। আজ বিদায়বেলায় আপনাকে জানাই আমাদের গভীর শ্রদ্ধা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। হে কর্মবীর, সুদীর্ঘ কর্মজীবনে আপনি ছিলেন সত্য ন্যায়ের এক আদর্শ প্রতীক। ….. (প্রতিষ্ঠানসমৃদ্ধিতে আপনি রেখেছেন অনন্য অবদান।

আপনার সহকর্মী হয়েও আমরা আপনার নিকট থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি এটা আমাদের কাছে সৌভাগ্যের। আপনার প্রতি ছাত্র ছাত্রীদের অপরিসীম শ্রদ্ধা ভালোবাসাই প্রমাণ করে, আপনি একজন সফল মানুষ।

তাই এরকম একজন মানুষকে কিভাবে বিদায় দিই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি --

Every farewell is the beginning of a new life.

তাই বেদনার পাশাপাশি এটাও ভাবতে খুব আনন্দ বোধ হচ্ছে যে সজীব বাবু একটি নতুন জীবনে ফিরে যাচ্ছেন। নিজের পরিবার, বাড়ি ঘর, আত্মীয়-স্বজনদের নতুনভাবে চেনার জানার সুযোগ হবে এই বিদায়ের মাধ্যমে। তিনি তাঁর পরিবারকে অনেক বেশি সময় দিতে পারবেন যেটা আগে হয়তো কখনো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অবসরে নিজেকে হয়তো আরো নতুনভাবে আবিষ্কার করবেন।তাই আপনার আগামী চলার পথ হোক সহস্র কোটি টুকটুকে লাল গোলাপের পাপড়ি বিছানো। শান্তি আর আর কর্মব্যস্ততায় ভরে থাক আপনার প্রতিটি ক্ষণ, আপনার দিন আপনার রাত।শেষ করছি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা দিয়ে---


"যেতে নাহি দিব হায়,

 তবু যেতে দিতে হয়,

তবু চলে যায়।"


সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।


বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য PDF 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন