থানকুনি পাতার উপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা 


এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন জলাভূমিতে এই গাছ জন্মে থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল Centella Asiatica যা একটি শাক অথবা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। থানকুনি পাতা বেড়ে ওঠার সময় মাটি থেকে সর্বোচ্চ মাত্রায় বিভিন্ন মিনারেল ও অন্যান্য উপাদান গ্রহণ করে। যা মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে পেটের আলসার প্রতিরোধ করে লিভারকে সুস্থ রাখে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এই পাতাটি হলো আমাদের সবার পরিচিত থানকুনি পাতা। যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ,ফসফরাস ,পটাশিয়াম, আয়রন বিটা-ক্যারোটিন পাওয়া যায়। আপনি যদি নিয়মিত এই পাতাটি সেবন করতে পারেন। তা হলে প্রচুর উপকারিতা পাবেন। তাই আজকের এই লেখাতে আমরা জানবো থানকুনি পাতার উপকারিতা কি কখন কিভাবে ও কতটুকু পরিমাণে এই পাতা সেবন করা উচিত। এছাড়াও কোন কোন সময় আমাদের থানকুনি পাতা সেবন করা একদম উচিত নয় এই সবকিছু জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।


থানকুনি পাতার উপকারিতা,থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা,থানকুনি পাতার গুনাগুন,থানকুনি পাতা,থানকুনি পাতার উপকার,থানকুনি পাতার বিস্ময়কর উপকারিতা,থানকুনি পাতার গুন,থানকুনি পাতার উপকারিতা কি,থানকুনি পাতার ১০টি জাদুকরী উপকারিতা,থানকুনি পাতার ব্যবহার,থানকুনি পাতার রেসিপি,থানকুনি,থানকুনি পাতার ক্ষতিকর দিক,থানকুনি পাতা চুলের উপকারিতা,থানকুনি পাতার ১০ উপকারিতা,থানকুনি পাতার উপকারিতা ভিডিও,থানকুনি পাতার দারুন সব উপকারিতা,যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা 

থানকুনি পাতার উপকারিতা 


প্রাকৃতিক এই উপাদানটির উপকারিতা আছে। ছোট থেকে বড় অনেক রোগ সারাতে থানকুনি পাতার জুড়ি মেলা ভার। প্রাচীন আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে পাতার উপকারিতা উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকি বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা থানকুনি পাতার উপকারিতা প্রমাণিত।এখন জেনে নেওয়া যাক থানকুনি পাতার উপকারিতা । যেমন মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করলে আমাদের দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্যান্টটা সাইক্লিক নামক উপাদান এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে। যে কারণে আমাদের ব্রেনের ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে এর ফলে সৃতিশক্তি উন্নতি ঘটে এবং বুদ্ধিমত্তা বাড়তে শুরু করে। এই কারণেই বাচ্চাদের থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এছাড়াও যদি বয়স্ক মানুষরা নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেতে শুরু করে তাহলে ভুলে যাওয়ার মতো রোগের সম্ভাবনা কমে এবং স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে উন্নত হতে শুরু করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে হাই ব্লাড প্রেসারকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। 


যাদের পরিবারে এমন রোগের ইতিহাস রয়েছে তাদের কিন্তু ৩০ বছর পার হলেই। নিয়মিত এই পাতার রস খাওয়া উচিত। এতে উপস্থিত থাকে নানা রকম উপকারী উপাদান যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি আপনার হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখতে সাহায্য করে । আপনি যদি উচ্চরক্তচাপের মত রোগে আক্রান্ত হতে না চান তাহলে নিয়মিত এই পাতা সেবন করতে পারেন। তবে যারা ইতিমধ্যে এই রোগে ভুগছেন তারা থানকুনি পাতা খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ।হজম ক্ষমতা উন্নত করে । 


থানকুনি পাতা হজম ক্ষমতা উন্নতি করতে দারুণ ভাবে সাহায্য করে । কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে থানকুনি পাতায় উপস্থিত থাকে একাধিক উপকারী উপাদান। যা হজম সহায়ক এসিডের ক্ষরণ করতে সাহায্য করে। ফলে বদহজম এবং গ্যাস অম্বল এর মত সমস্যা মাথাচাড়া দিতে পারেনা । বর্তমানে প্রচুর মানুষ গ্যাস অম্বল এর মতো সমস্যায় ভুগছেন এবং প্রায় নিয়মিত ভাবে অ্যান্টাসিড সেবন করছেন। এর ফলে কিন্তু নানা রকম রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই আপনি যদি এই প্রাকৃতিক উপাদান করতে পারেন তাহলে আপনার হজম ক্ষমতা উন্নত হবে এবং গ্যাস অম্বল এর মতো সমস্যা আপনার ধারে কাছে আসতে পারবে না। চুল ভালো রাখে।


আপনি যদি চুল পড়ার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে নিয়মিত এই পাতা সেবন করতে পারেন । কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে থানকুনি পাতা সেবন করলে আমাদের স্ক্যাল্ফের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে চুল ঝরে পড়ার মাত্রা অনেকটা কমতে শুরু করে। এছাড়াও চুল পড়ার হার কমাতে এই পাতা থেঁতো করে নিতে হবে। তারপর এর সঙ্গে পরিমাণমতো তুলসী পাতা ও আমলা মিশিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণটি ভাল করে চুলে লাগিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এইভাবে সপ্তাহে দুবার চুলের পরিচর্যা করলে দেখবেন আপনার চুল পড়ার হার অনেকটাই কমে গেছে । ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। 


থানকুনি পাতায় উপস্থিত থাকে অ্যামাইনো এসিড, বিটা ক্যারোটিন এবং ফাইটোকেমিক্যাল যা ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং বলিরেখা কম করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে সহজেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় সেই সঙ্গে কম বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় । তাই আপনি যদি আপনার স্কিনকে ভালো রাখতে চান তাহলে নিয়মিতভাবে থানকুনি পাতা সেবন করতে পারেন। টক্সিক উপাদান দূর করে। নানা রকম ভাবে আমাদের দেহে টক্সিক উপাদান উৎপন্ন হয় এবং আমাদের রক্তে প্রবেশ করে এই টক্সিক উপাদানগুলি দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেহে উপস্থিত থাকলে নানা রকম অসুখ হতে পারে। এই প্রাকৃতিক উপাদানটি কিন্তু আমাদের দেহ থেকে টক্সিক উপাদান গুলি বের করে দিতে সাহায্য করে। 


আপনি যদি প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতার সঙ্গে এক চামচ মধু সেবন করেন। তাহলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান গুলি বের হয়ে যেতে শুরু করে। এর ফলে একাধিক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায় । ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত থানকুনি পাতা সেবন করলে খুব সহজেই ওজন কমানো যায়। কারণ থানকুনি পাতা খেলে হজম ক্ষমতা উন্নতি ঘটে । ফলে দেহে অতিরিক্ত মেদ জমার সম্ভাবনা কমে যায় । এর পাশাপাশি প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম করলে ওজন কমবে চোখে পড়ার মতো। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আরেকটি বিষয় আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সেটা হল বেশি মাত্রায় ক্যালরি রয়েছে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তাহলে আপনি খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। অনিদ্রা দূর করে। 


আপনি যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা সেবন করতে পারেন। তাহলে অনিদ্রার মতো সমস্যা খুব সহজেই দূর করতে পারবেন। কারণ এতে রয়েছে একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা আপনার স্ট্রেস লেভেল কমাতে ও নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। ফলে অনিদ্রার মতো সমস্যা দূর করতে সময় লাগে না। ক্ষতস্থান নিরাময় করে। থানকুনি পাতার উপকারিতা হয়তো অনেকেই জানেন না কোথাও একটু কেটে গেলে সেখানে যদি অল্প করে থানকুনি পাতা থেঁতো করে লাগানো যায়। তাহলে দারুণ উপকার পাওয়া যায় । এই পাতায় উপস্থিত থাকে সাপোনিজ নামক উপাদান যা ক্ষত নিরাময় করতে সাহায্য করে এবং ক্ষতস্থানে কোন ধরনের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। মানসিক অবসাদ দূর করে। 


বর্তমান সময়ে অনেক মানুষ মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন । এক্ষেত্রে থানকুনি পাতা জাস্ট ম্যাজিকের মতো কাজ করে। আপনি যদি নিয়মিতভাবে থানকুনি পাতা সেবন করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই অ্যাংজাইটি এবং মানসিক অবসাদ দূর করতে পারবেন। কারণ এতে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা সেরেটোনিন নামক হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে খুব সহজেই মানসিক অবসাদকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়াও থানকুনি পাতার আরো অনেক উপকারিতা আছে যেমন ঝড়ের প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে এবং দেহে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। 


থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম


সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন অথবা ৫ থেকে ৬ টি থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন ।  এক্ষেত্রে কিন্তু আপনি সমান উপকারিতা পাবেন। যদি ডায়াবেটিস না থাকে তাহলে এক চামচ মধুর সঙ্গে খেতে পারেন। তবে থানকুনি পাতা সেবন করার আগে আমাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক এবং সচেতন হওয়া প্রয়োজন যেমন আপনার যদি লিভারের সমস্যা থাকে তাহলে এই পাতা সেবন করা উচিত নয়। আপনার যদি এলার্জির মত সমস্যা থাকে তাহলে এই পাতা একদম সেবন করবেন না । আপনার যদি কোন রকম সার্জারি অপারেশন হয়ে থাকে তাহলে কিন্তু এই পাতা সেবন করা উচিত নয়। এছাড়াও প্রেগনেন্সি এবং ব্রেস্ট ফিডিং এর সময় এই পাতা সেবন করা একদম উচিত নয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন